প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। উত্তরও মিলল কয়েকদিনের মধ্যেই। শুধুমাত্র পরীক্ষক পরিবর্তনেই ভেঙে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘুঘুর বাসা’। একই সঙ্গে প্রমাণিত হল একশ্রেণীর অধ্যাপক-ছাত্রদের সম্পর্কে ওঠা স্বজনপোষণের অভিযোগও। শুক্রবার ইতিহাস বিভাগের স্নাতকস্তরের চূড়ান্ত মেধাতালিকায় ব্যাপক রদবদল সামনে এলো। দেখা যায় বাতিল হওয়া মেধাতালিকায় নাম না থাকা সত্তেও প্রকাশিত হওয়া চূড়ান্ত তালিকায় ১৫জন পরীক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নজিরবিহীন ভাবে বেড়েছে তাদের নম্বরেও। যা নিয়ে অস্বস্তিতে যাদবপুরের সিন্ডিকেট। ঘটনায় তদন্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং রেজিস্ট্রার। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান আমরা আগেই বলেছিলাম যে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া উচিত। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একইরকম পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া উচিত। যারা শূন্য পেয়েছিল তাদের নম্বরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ভাবুন এতে গরিমা বাড়ল কিনা। এই নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।
একই সঙ্গে তিনি জানান যাদবপুরের ভিসি আছেন তিনি দেখবেন। আমাকে রিপোর্ট পাঠাবেন। প্রসঙ্গত, যাদবপুরে স্নাতকস্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে কলাবিভাগের ৬টি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় গত জুলাইয়ে। কিন্তু মেধাতালিকা প্রকাশের সময় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সবথেকে বেশি গরমিল দেখা যায় ইতিহাসের মেধাতালিকায়। যে ছাত্রছাত্রীরা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮০-৯০ করে নম্বর পেয়েছে সেখানে প্রবেশিকায় তারা পেয়েছেন ০ থেকে ১০ এর মধ্যে। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগে পুরো মেধাতালিকায় বাতিল করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। বিতর্ক এড়াতে তড়িঘড়ি কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের দ্বারা উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করা হবে। এরপর নতুন করে শুক্রবার ইতিহাস বিভাগের মেধাতালিকা প্রকাশ হয়। যেখানে দেখা যায় মেধাতালিকায় নতুন করে স্থান পেয়েছে ১৫ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে নম্বর বেড়েছে অর্চিষ্মান কুন্ডুর। যে পুরোনো তালিকায় নম্বর পেয়েছিল ৭, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর বেড়ে হয়েছে ৫৪.৫। অর্থাৎ তার নম্বর যোগ হয়েছে ৪৭.৫। আরেকজন পরীক্ষার্থী শ্রেয়া বণিক , যে প্রথমে পেয়েছিল ১৮, এবারে ৩৬ নম্বর বেড়ে হয়েছে ৫৪। এই ভাবে রাহুল শর্মা,সৃজন দত্ত, সোহিনী বিশ্বাস প্রত্যেকেরই নম্বর বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কারও ৩৯, কারো ১৫, আবার কারুর বেড়েছে ২১ নম্বর। যা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করছে শিক্ষামহল। একই সঙ্গে যা কলঙ্কেরও।
এই ঘটনার পর বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন যে তাহলে কি ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’ছিল? সিন্ডিকেট তৈরি করে পছন্দের ছেলেমেয়েদের ঢুকিয়ে সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় রাখতে কি এটা করা হয়েছিল? যে কারণে অবস্থান-বিক্ষোভ-অনশনের নাটক করেও ক্যাম্পাসে অচলবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। তখনই স্পষ্ট হয়েছিল যে পুরো পরীক্ষা এবং ভর্তির প্রক্রিয়াকে নিজেদের কন্ট্রোলে রাখার জন্যই আন্দোলনে করা হয়েছিল। যাতে স্বজনপোষণ করা যায় বিনা বাধায়।