আগামীকাল ভারতের স্বাধীনতা দিবস, গোটা রাষ্ট্র দেশপ্রেমের হাওয়ায় ভাসবে। তেরঙ্গা পতাকায় ছেয়ে যাবে চারিদিক, সাথে গা গরম করা সব ভাষণ। কাল বিকৃত উচ্চারণে ‘বন্দেমাতরম’ হয়ে যাবে ‘ভান্দেমাতরম’, ‘জন গণ মন’ হবে ‘জানা গাণা মানা’- বাঙালির বুকের ভেতরে দাউ দাউ আগুন জ্বলবে। বহু বাঙালির রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা দিবসে দিকে দিকে ‘কাপুরুষ’ সাভারকারের নামে জয় ধ্বনি হবে। ব্রিটিশকে মুচলেকা দেওয়া খলনায়ক হয়ে যাবে রাষ্ট্র নায়ক। স্বাধীন ভারতে বাঙালি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আজ হয়ত সুভাষচন্দ্র বসু, সূর্যসেন দের আত্মা কাঁদছে।
আজ ১৪ ই আগস্ট, বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কালোদিন, সবচেয়ে খারাপ দিন। আজকের দিনে কায়েমি স্বার্থে বাংলা ও বাঙালির বুকের উপর কাঁটাতার ফুটিয়ে দেওয়া হয়। যে যন্ত্রণা আজও বাঙালি বয়ে চলেছে, এর কোনো ওষুধ নেই। আজ সালটা ২০১৮, স্বাধীনতা লাভ ওও বাংলা ভাগের পর ৭০ বছর কেটে গেছে। আজও বাঙালিকে ভারতে নিজের মাটিতে উদ্বাস্তু হওয়ার ভয় তাড়া করছে, আজও বাঙালি নিজভূমে পরবাসী। আজ আবার বাংলা ও বাঙালি বিরোধী শক্তিরা বাঙালিকে চিরতরে শেষ করতে নেমেছে। বাংলা ভাগ বাঙালির কোমর ভেঙেছিল, আজ সব কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। আসাম-মনিপুর-ত্রিপুরা ও ভারতের নানা জায়গায় এমনকি বাংলার মাটিতেও নানা ভাবে বাঙালি বিপন্ন। আসামে প্রায় ৪০ লাখ বাঙালিকে উৎখাত করার পরিকল্পনা! সেলুলার জেলের অন্ধকারে বাঙালি বিপ্লবীরা নিজেদের শেষ করে দিয়েছিল, কিশোর-কিশোরীরা হাতে বোম-বন্দুক তুলে নিয়েছিল এই স্বাধীনতার জন্য? ব্রিটিশ গিয়ে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা রাজ করবে, এই স্বপ্ন নিয়ে কি বাংলার ঘরে ঘরে মায়েরা ছেলে-মেয়েদের স্বাধীনতার যুদ্ধে পাঠিয়েছিল? আজ বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও বাঙালির অধিকার বিপন্ন! গোটা ভারত জুড়ে উত্তর ভারতীয় ও গুজরাটি-মাড়োয়াড়িদের আধিপত্য, বাঙালিকে দাস বানানোর কাজ চলছে।
এই রাষ্ট্র কার? এই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নাথুরাম গডসের গলায় মালা দেন, পূজো করেন। এই রাষ্ট্র চালাচ্ছে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধি শক্তি। ব্রিটিশের পা চাটা দালালরা আজ রাষ্ট্রের ‘কারিয়াকর্তা’। তারা দেশপ্রেম নিয়ে ভাষণ দিচ্ছে। কোনো মানুষকে যখন তখন দেশদ্রোহী দাগিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্র সরকারের বিরোধীতা করলেই “পাকিস্তানে যা, বাংলাদেশে যা” হুঙ্কার ছাড়ছে। রাষ্ট্র আর বিজেপিকে এক করে দিতে চাইছে তারা। যারা ব্রিটিশের পা চাটল, যারা জাতীয় পতাকা পোড়ালো, যারা সংবিধান পোড়ালো তারা আজ দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট দিচ্ছে। প্রতিদিন ফেসবুক, হোয়াটস্যাপে ও টিভি চ্যানেলগুলোতে বসে মগজধোলাই করছে, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের দাস বানানোর চেষ্টা চলছে সমস্ত অহিন্দিভাষীকে। এই জন্যই কি বাঙালি আত্মত্যাগ করেছে? এই স্বাধীনতাই কি চেয়েছিল বিপ্লবীরা?
আজ বাঙালির এই দুর্দিনে বাংলার মাটিতে রাজাকাররা মাথাচাড়া দিচ্ছে, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান সাম্রাজ্যের পা চাটা কুত্তারা চারিদিকে ল্যাজ নাড়িয়ে ভেউ ভেউ করছে। বাঙালির মূল শত্রু দাঙ্গাবাজদের এই স্থানীয় ঠিকাদাররাও।
১৯৪৬ থেকে বাঙালি হারতে শুরু করেছে, বাঙালিকে সাম্প্রাদায়িক ভাবে লড়িয়ে দিয়ে ফায়দা লুটেছে ‘দেশনায়করা” ও ব্যবসাদাররা।সেই শুরু, আজও বাঙালি হেরেই চলেছে, এবার আর না। এবার প্রতিরোধের সময়, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গত সত্তর বছর বাঙালি জাতি ঘুমিয়েছে, এবার বাঘের ঘুম ভাঙছে। বাঙালি জাগলে কি হয়, তা ব্রিটিশ জানে, তা পাকিস্তানের উর্দু সাম্রাজ্যবাদী কুত্তারা জানে। এবার হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী কুত্তারা বুঝবে, কত ধানে কত চাল। নব্য রাজাকারদের হিসাব নেবে বাঙালি, ইতিহাস উচিত শিক্ষাও দেবে।
আমরা ভারত রাষ্ট্রের বাঙালি। এই রাষ্ট্রের মাটিতে বাঙালি জাতির অধিকার চাই, হিন্দিভাষীদের মতো একই অধিকার চাই। যে জাতি স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিল, তারা আজ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক? এটা হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের বাবার রাষ্ট্র? কড়ায়গণ্ডায় হিসাব বোঝার সময় এসেছে, বাঙালি তৈরিও হচ্ছে। যারা বাংলার মাটিতে ধর্ম ধর্ম খেলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুত্ব-সংস্কৃতি, দাঙ্গাবাজ ঢোকাচ্ছে, তাদের বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দেওয়া সময়ের দাবী। আজ ১৪ ই আগস্ট বাঙালির বুকে কাঁটাতারের ক্ষতটায় ব্যথা হচ্ছে। আগামীকাল যতবার ‘ভান্দেমাতরম’ ও ‘জানা গাণা মানা’ শুনবে, বাঙালি ততবার শপথ নেবে, এই হিন্দি-উর্দু সাম্রাজ্যবাদীদের শেষ দেখে ছাড়বে। যতবার সাভারকারের নামে জয়ধ্বনি হবে, ততবার সুভাষচন্দ্র বসুর নামে শপথ নেবে বাঙালি। আমরা যেন ভুলে না যাই, আমরা চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষচন্দ্র, সূর্য সেন, বাঘাযতীন, ফজলুল হক, বিনয়-বাদল-দীনেশের বংশধর, আমরা বাঘের জাত!
জয় বাংলা!
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )