যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রবেশিকা নিয়ে যতটা হইচই হয়েছে, তার তুলনায় বাকি বিষয়গুলি কিছুটা যেন ধামাচাপাই পড়ে গিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়, যেমন ইংরেজির প্রবেশিকা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। প্রবেশিকায় প্রবন্ধের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া যদি একটি দিক হয়, তাহলে অন্যদিকও রয়েছে। রাজ্য এবং সর্বভারতীয় পরীক্ষাগুলিতে ঝুড়ি ঝুড়ি নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা বিস্ময়করভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছেন এই প্রবেশিকায়। কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।
ইংরেজির প্রবেশিকায় প্রবন্ধের জন্য ৪০ নম্বর বরাদ্দ থাকত। কিন্তু তাতেও হামেশাই কানাঘুষো অভিযোগ উঠত, এক শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের আগেভাগে প্রবন্ধের বিষয় জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তাঁরা বাকিদের টেক্কা দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারছেন। কারণ, ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৫০ নম্বরই যদি হাতের মুঠোয় থাকে, তাহলে ফারাকটা বড়সড় হয়ে যায়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে কেউই সঠিক জায়গায় অভিযোগ জানিয়ে উঠতে পারতেন না। ইতিহাসের ক্ষেত্রে বোর্ডের পরীক্ষা এবং প্রবেশিকায় প্রাপ্ত নম্বরের দুস্তর ব্যবধান থাকায় সেটি কর্তৃপক্ষেরই চোখে লেগেছে। যার জেরে ইতিহাস বিভাগের প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভাশিস বিশ্বাস। কিন্তু ইংরেজির ক্ষেত্রে দ্বাদশের পরীক্ষায় যিনি ৯৬ পেয়েছেন, তিনি প্রবেশিকায় পেয়েছেন সাড়ে ৮৬ নম্বর। আবার আগাগোড়া প্রথম ভাষায় ইংরেজি পড়া ছাত্র, যিনি দ্বাদশের পরীক্ষাতেও ৯৪ পেয়েছিলেন, তিনি প্রবেশিকায় পেয়েছেন ৩২। আসলে প্রবন্ধের মান পুরোপুরি আপেক্ষিক। শিক্ষক ভেদে এর মূল্যায়ন ভিন্ন হবে। আর যেভাবে তাড়াহুড়ো করে খাতা দেখা হয়েছে, তাতে, অনিচ্ছাকৃত ভুলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেমন এক ছাত্রীর দ্বাদশ শ্রেণীতে প্রাপ্ত নম্বর ৯৬-এর বদলে ৮৮ প্রকাশিত হয়েছিল। সেটা সংশোধনী দিয়ে স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রবেশিকায় প্রাপ্ত নম্বরের ক্ষেত্রে এমন ভুল হয়নি তো? যিনি ৮৬.৫ নম্বর পেয়েছেন, তাঁকে তো প্রবন্ধে অন্তত ৪০ পেতেই হয়েছে।
কিন্তু সেটা অসম্ভব লাগছে কেন? কারণ যে বিষয়গুলি তাতে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে যথেষ্ট উচ্চমানের। বিষয়গুলির কাছাকাছি বাংলা তর্জমা করলে এরকম দাঁড়াবে- ১. একজন লেখক একটি ভিনদেশ, ২. আমরা ইতিহাস থেকে এটাই শিখি যে আমরা ইতিহাস থেকে কিছু শিখি না, ৩. কোনও কিছুকে যত সরু করেই কাটো না কেন, তার দু’টি দিক থাকে, ৪. কাব্য হল একটি ছায়াকে নাচের আহ্বান জানানো প্রতিধ্বনি এবং ৫. ব্রহ্মাণ্ডের শেষ প্রান্তে একটি বইয়ের দোকান। দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুায়ার প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে যতটা সৃজনশীল হওয়া সম্ভব, তাতে এই বিষয়গুলিকে একেবারে পেড়ে ফেলা কঠিন। কিন্তু বেশ কিছু উদাহরণে দেখা যাচ্ছে, ব্যাপারটা সেরকম হয়নি। আবার দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯০-৯৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা ‘কাট অফ মার্কস’-এর ধারেকাছেও নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, প্রবন্ধে যেটা ৪০ ছিল সেটা মাত্র ১০ বেড়ে ৫০ হয়েছে। এতে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু দেখছি না। কিন্তু এটা তিনি স্বীকার করেন, যাঁদের অন্তত একটি বিষয় জানা থাকবে, তাঁরা বাকিদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। বেশ কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে আগেভাগে প্রশ্ন জেনে যাওয়ার আশঙ্কা তিনিও উড়িয়ে দিতে পারেননি।