দীর্ঘ দেড় বছরের মাথায় ভাঙড়ের ‘পাওয়ার গ্রিডের’ জট কাটল। শনিবার সন্ধ্যায় আলিপুরে জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও জানিয়ে দিলেন, আগামী মঙ্গলবার থেকেই ভাঙড়ে পাওয়ার স্টেশন তৈরির কাজ পুরোদমে চালু হয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের ফলেই কয়েকশো কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্পের স্থায়ী সমাধান হল বলে দাবি করেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, এরফলে ভাঙড়ে শান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল। এদিন জমি কমিটির সঙ্গে প্রশাসনের কর্তাদের ম্যারাথন বৈঠকের পর পাওয়ার স্টেশন চালুর বিষয়ে নির্দিষ্ট ১০টি বিষয় নিয়ে একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। গ্রিডের নাম বদলে স্টেশন করা হয়। বিষয়গুলি যথাযথভাবে রূপায়ণ হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য একটি সাব কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছে প্রশাসন। ১২ জনের ওই কমিটিতে প্রশাসন ও কমিটির লোকজন থাকছে। পাশাপাশি পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও জমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়া মানুষদের সরকারি নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সম্মতিপত্রে। সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে ১২ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। সম্মতিপত্রে অবশ্য তার কোনও উল্লেখ নেই।
জমি কমিটির মুখপাত্র অলীক চক্রবর্তী বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকার আলোচনায় বসুক বলে দাবি জানানো হয়েছিল। দেরিতে হলেও পাওয়ার গ্রিডের জট ছাড়াতে সদর্থক ভূমিকা পালন করার জন্য রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের প্রশংসা করছি। স্বাভাবিকভাবে ভাঙড়ে পাওয়ার স্টেশনের কাজ চালুর বিষয়ে আর কোনও বাধা রইল না।
বাস্তবিকই ভাঙড় পাওয়ার গ্রিড নিয়ে জট কাটার বিষয়টি খুব সহজ ছিল না। ২০১৬ সালে আন্দোলনকারীরা যখন সরব হয়েছিল, তখন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা হয়েছিল। শাসকদলের একটি অংশ দলের শীর্ষনেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে আন্দোলনকারীদের দমনপীড়ন করে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। বরং এই ঘটনা উস্কে দিয়েছিল শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল। তার পরিণতিতেই ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি অগ্নিগর্ভ হয় ভাঙড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিসের রীতিমতো লড়াই হয়। দু’জন গুলিতে মারা যায়। পুলিসের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে চলে পথ অবরোধ। পুলিস ও প্রশাসনের আধিকারিকরা কার্যত এলাকাছাড়া হন। পরবর্তী সময়ে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কৌশলে পুলিস জমি কমিটিকে শায়েস্তা করার জন্য এগিয়েছিল। তাতে লাভ তো হয়নি। উল্টে বোমা ও গুলিতে আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে যায় ভাঙড়ের খামারআইট, মাছিভাঙা থেকে পদ্মপুকুর। শেষ পর্যন্ত চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক রত্নাকর রাওকে পাওয়ার গ্রিড সমাধানের দায়িত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। গত জুন মাস থেকে জমি কমিটিকে আলোচনার টেবিলে আনার জন্য তোড়জোড় শুরু করে প্রশাসন। এর মধ্যে বারুইপুর জেলা পুলিসের তৎপরতায় অলীক চক্রবর্তীর গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনও পান। পাশাপাশি আরাবুলের শ্রীঘরবাসের ঘটনা প্রশাসনকে বাড়তি সুবিধা দেয়। কোনওরকম রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রশাসন সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করে। ভাঙড়ে থমকে যাওয়া সরকারি প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করে। শেষে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসে জমি কমিটি। পর পর পাঁচবার বৈঠকের পর শনিবার তার চূড়ান্ত সমাধান হল।