পরিবহণ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে জাতীয় মডেল করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর নীতি আয়োগ। পথ নিরাপত্তায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচি ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে ‘পথদিশা’ অ্যাপ সব রাজ্যকে রূপায়ণের পরমার্শ দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে নীতি আয়োগ। আগামী ৪ সেপ্টম্বর দিল্লিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে নীতি আয়োগের আলোচনায় এই মডেল রূপায়ণের জন্য সব রাজ্যকে পরামর্শ ও নির্দেশিকা দেওয়া হবে।
শুক্রবার কলকাতায় নীতি আয়োগের বৈঠকে বিজেপি শাসিত ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিশগড় এবং বিজেডি শাসিত ওডিশা পশ্চিমবঙ্গের এই অ্যাপ রূপায়ণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিহার সরকার রাষ্ট্রীয় পরিবহণ পরিষেবা তুলে দেওয়ায় এই অ্যাপ চালুর প্রশ্নই আসছে না। যদিও বেসরকারি পরিবহণকে এক সূত্রে বাঁধতে বিহার এই অ্যাপ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবে বলে জানিয়েছে।
শহরকে দূষণমুক্ত, গতিশীল ও পথ নিরাপত্তার পরিকাঠামো ও উদ্যোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য এ দিন নীতি আয়োগের পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয়ক উপদেষ্টা অশোক ঝুনঝুনওয়ালা কলকাতায় এসেছিলেন। বাকি রাজ্যগুলি হল, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়। বৈঠকে অশোক রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দেন, আজকের দিনে পরিবেশ দূষণ একটা বড় ইস্যু। নীতি আয়োগ চায়, দূষণমুক্ত পরিবহণ পরিষেবা দিয়ে শহরকে গতিশীল করতে। এ জন্য ই-বাস পরিষেবা চালুর কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশি, অটোর মতো হাল্কা যানবাহনকে দূষণ মোকাবিলায় ই-বাহনে রূপান্তর করার কথা ভাবতে হবে। কারণ এই ধরনের যানবাহন প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের যোগাযোগের সূত্র হিসেব কাজ করে। নজর রাখতে হবে পথ নিরাপত্তার বিষয়টিও। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকার‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ কর্মসূচিও প্রতিটি রাজ্যকে অনুসরণ করতে বলা হবে। এই কর্মসূচি জাতীয় মডেল হওয়ার যোগ্য। দূষণমুক্ত পরিবহণ পরিষেবায় উন্নত প্রযুক্তি ও তার প্রযোগ নিয়ে আইআইটির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
শুধুমাত্র ই-বাহন নয়, শহরের যানজট ও দূষণ কমাতে বেসরকারি গাড়ির চাপ কমানো নিয়েও নীতি আয়োগ চিন্তা ভাবনা করছে বলে এ দিনের বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। সেজন্য বাসের বদলে‘শেয়ার’গাড়ির ব্যবহার কী করে জনপ্রিয় করা যায় তা দেখা দরকার। কারণ অনেক সময়েই একজন একটি গাড়ি নিয়ে পথে নামছে। এই ব্যবস্থা বদলে তিন জন একটি গাড়ি ব্যবহার করলে অনেকটা সুরাহা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে নীতি আয়োগের উপদেষ্টাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইতিমধ্যেই কলকাতা ও নিউটাউনে ই-বাস চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় ৮০টি ই-বাস কেনা হচ্ছে। জলপথ বিকাশে ‘জলধারা’প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মালদহ, কোচবিহার, বালুরঘাটের মতো দূরের শহরগুলির সঙ্গে কলকাতার উড়ান চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে রাজ্যের রাস্তার মান ও জঞ্জাল সাফাইয়ে কাজ নিয়েও প্রশংসা করেন নীতি আয়োগের উপদেষ্টা। তাঁর মতে গত তিন বছরে কলকাতার রাস্তার হাল অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে।