গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির ধাঁচে রাজ্যে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাব তৈরি করা হবে। সেই ঘোষণার ছ’মাসের মধ্যেই নিউটাউনে ওই হাব তৈরির জন্য ১০০ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। আগামী সোমবার অর্থাৎ ১৩ আগস্ট সেই জমিতে বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাবের শিলান্যাস বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস, কগনিজেন্ট জমির জন্য আবেদন করেছে। টিসিএসকে ২০ একর এবং কগনিজেন্টকে ১২ একর জমি দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। সেই সঙ্গে আইএসআইকেও চার একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের ওই প্রকল্প সারা ভারতেই ‘Iconic’ হয়ে থাকবে বলে আশা করছে রাজ্য প্রশাসন৷
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যের ইলেকট্রনিক্স ইনডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের অনুষ্টানে জানান, মুখ্যমন্ত্রী যেদিন সিলিকন ভ্যালি উদ্বোধন করবেন, ওইদিনই প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত বই প্রকাশ করা হবে৷ ব্রাত্যর বক্তব্য, ‘‘সারা ভারতে Major IT Player-রা এই প্রকল্পে আসবে৷ তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা এখানে পাওয়া যাবে৷’’
রাজ্যে ইনফোসিসের প্রথম ক্যাম্পাস এবং উইপ্রোর দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ইস্যুতে জমি পেয়েও ক্যাম্পাস তৈরির কাজ শুরু করেনি ইনফোসিস৷ কিছুদিন আগে সেই জটিলতা কেটেছে৷ রাজারহাটে কাজ শুরু করেছে ইনফোসিস৷ তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর সূত্রে খবর, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ শুরু করেছে উইপ্রো৷
অনেক আগেই তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ন্যাসকম’ এর কর্তাব্যক্তিরা বলেছেন, বাংলা হার্ডওয়্যার শিল্পের জন্য আদর্শ জায়গা৷ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় সিলিকন ভ্যালির অন্যতম বৈশিষ্ট হল হার্ডওয়্যার৷ রাজ্যে হার্ডওয়্যার পার্কগুলির মধ্যে সোনারপুরে শুরু হয়েছে হার্ডও্যারায় পার্ক, নৈহাটি ও ফলতাতে শুরু হওয়ার মুখে৷
বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাব তৈরি হয়ে গেলে নিউটাউনের চেহারা আরও বদলে যাবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আইটি’র ক্ষেত্রে প্রধান গন্তব্যস্থল হয়ে দাঁড়াবে এই সিলিকন ভ্যালি হাব। ইতিমধ্যে নিউটাউনে টিসিএস তাঁদের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। সেখানে বহু ছেলেমেয়ে কর্মরত রয়েছেন। প্রখ্যাত আইটি সংস্থা ইনফোসিস সব জটিলতা কাটিয়ে বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। ইনফোসিস রাজ্যে তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংস্থার কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ওয়ার্ক কালচাল অনেক বদলে গিয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ নেই। মেধাবী শ্রমিক ও পেশাদারের অভাব নেই। জমি পাওয়ার ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা নেই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করেন। যেখান থেকে বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে জমি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তাঁর পরিকল্পনা মতো শিল্পতালুকও তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংস্থা জমি চেয়ে আবেদন করেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেটা বেস সেন্টার তৈরি করার জন্য জমি চেয়েছে রিলায়েন্সও। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। নবান্ন চায়, বিভিন্ন সংস্থা শিল্পস্থাপনে এগিয়ে আসুক, রাজ্য তাদের সব রকম সাহায্য করবে।