আশঙ্কা ছিল আগেই। আর সেই আশঙ্কাকে সত্যি করেই মেধা তালিকা নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এবার ইংরেজির মেধা তালিকায় দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় এক ছাত্রী যে নম্বর পেয়েছেন তার থেকে ৮ নম্বর কম দেখানোর অভিযোগ উঠল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি এমনই যে, এই ভুল ঠিক করলে ইংরেজির মেধা তালিকা ফের আবার নতুন করে প্রকাশ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন তালিকা প্রকাশিত হয়নি। এদিকে ৯ এবং ১০ আগস্ট রয়েছে ভর্তি। ফলে আবার নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অর্ণা দীর্ঘাঙ্গী নামে ওই ছাত্রী সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৯৬ পেয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তালিকায় ৯৬–এর বদলে ৮৮ দেখানো হয়েছে। অর্ণা প্রবেশিকায় ৫৪ নম্বর পাওয়ায় সব মিলিয়ে তাঁর ‘স্কোর’ হয়েছে ৭১। এবং তিনি মেধা তালিকার ১১০ নম্বর স্থানে রয়েছেন। কিন্তু আসলে তাঁর নাম মেধা তালিকার ৬০ নম্বর স্থানে থাকার কথা। সোমবার প্রকাশিত মেধা তালিকায় প্রবেশিকা এবং উচ্চমাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়। তারপরই এদিন ওই ছাত্রীর বাবা আশিসকুমার দীর্ঘাঙ্গী রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং ইসিতে উচ্চশিক্ষা সংসদের সদস্য এবং ইংরেজির শিক্ষক মনোজিৎ মণ্ডলকে বিষয়টি ই–মেল করে জানান। অর্ণার প্রবেশিকায় ৫৪ পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি খাতাও দেখতে চেয়েছেন। এ নিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ভুলটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই হয়েছে। অবশ্যই ঠিক করা হবে। কিন্তু তার ফলে ইংরেজির মেধা তালিকা ফের প্রকাশ করতে হবে। বিষয়টি আমরা দেখছি।’
এদিকে, উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে ইতিহাস বিভাগে পরীক্ষা দেওয়া প্রতিটি পড়ুয়ার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট। সূত্রের খবর, উচ্চমাধ্যমিকে অত্যন্ত ভাল ফল করা এক পড়ুয়ার প্রবেশিকায় পাওয়া নম্বর দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাঁর খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে ৪ পাওয়া ওই পড়ুয়ার নম্বর বেড়ে হয় ৬৬। বিষয়টি ভর্তি কমিটির বৈঠকে ওঠে। ইতিহাসের প্রবেশিকায় ০, ১, ২, ৩, ৬, ৭, ৮ নম্বর ওঠা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিহাস বিভাগে ২৫ নম্বরের ৯টি প্রশ্ন এসেছে। তার মধ্যে ২টি লিখতে হবে। এই প্রশ্নগুলির মধ্যে একজন মহিলা শাসক বা রাজনীতিবিদ সম্পর্কে এবং একটি ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে লিখতে বলা হয়েছে। যা নিয়ে মনোজিৎবাবু বলেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় যারা ৯০ পেয়েছে, তারা এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারছে না ভেবেই অবাক লাগছে।’
রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর কোনও স্বার্থ যাতে লঙ্ঘিত না-হয়, সেটা আমরা দেখব। ওই ছাত্রীর যা প্রাপ্য, যে-ভাবেই হোক, আমরা সেটা দেব।’’ মেধা-তালিকা নতুন করে প্রকাশ করা যায় কি না, সেই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়েবকুপা-র যাদবপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সর্দার বলেন, ‘‘সিআইডি বা কোনও বিচারপতিকে নিয়ে কমিশন গড়ে তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।’’