মুখ্যমন্ত্রী এটিএমে জালিয়াতির বারবাড়ান্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ডিজিটাল অর্থনীতিকে দায়ী করেছেন। ‘ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা অনেকদিন আগেই চলে গেছে, যেদিন থেকে নোটবন্দি হয়েছে’ একের পর এক এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনার পিছনে মূল কারণ হিসেবে রয়েছে দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘প্লাস্টিক ইকোনমি’র প্রচার, নবান্নে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে কার্যত এভাবেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি গোটা বিষয়টিতে বিশদ তদন্ত এবং অর্থমন্ত্রকের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি।
নবান্ন থেকে বের হওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এটিএম কেলেঙ্কারির ঘটনায় তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে দৃশ্যত বিরক্ত মমতা বলেন, নোট বাতিল পর্ব থেকেই মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া শুরু। নোট বাতিলের দিন থেকেই তো ডিজিটাল আর ক্যাশলেস ভারতের বিজ্ঞাপন শুরু হয়েছিল, প্লাস্টিক ইকোনমি! তাঁর আক্ষেপ, যে দেশের বহু গ্রামে এখনও ব্যাঙ্কই গড়ে ওঠেনি, সেখানে প্লাস্টিক ইকোনমি চলে? প্লাস্টিক ইকোনমি সেখানেই চলে, যেখানে সবাই বিষয়টি বোঝে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটা খুবই সাধারণ মানুষের জন্য। সহজ, সরল, খেটেখাওয়া মজুর, শ্রমিক, খেতমজুর আর প্রান্তিক মানুষের সংখ্যা এখানে বেশি। এছাড়াও চাকরিজীবী, শিক্ষক, শিক্ষিকা সবই আছে। তবে সিংহভাগটাই অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষ। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, এরকম একটা দেশে প্লাস্টিক ইকোনমি চলতে পারে? এটিএম কেলেঙ্কারির বিষয়ে মমতার বক্তব্য, ডিজিটাল ইকোনমিতে কার্ড নির্ভরতা বাড়ছে। আর কার্ডের সেই তথ্যও লোপাট হয়ে যাচ্ছে। এটিএম কেলেঙ্কারির এই বিষয়টি সংসদের মাধ্যমে গোটা দেশের কাছে তুলে ধরার প্রস্তুতিও নিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় সরব হতে বলা হয়েছে দলের সংসদীয় টিমকে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সাধারণ মানুষের টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। পাচার হয়ে যাচ্ছে যাবতীয় তথ্য। গোটা বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। অর্থমন্ত্রক কী করে, এখন সেটাই দেখার!
এদিকে ব্যাঙ্কের এটিএম জালিয়াতি রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক সরকার। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পান্ডে সমস্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ নেন। বেশ কিছু নির্দেশ তিনি জারি করেন। প্রতি ব্যাঙ্কের এটিএম নিরাপত্তারক্ষী থাকা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দেন, সমস্ত গ্রাহক টাকা ফেরত পাবেন। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে এটিএম থেকে জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে শহরে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও এটিএম থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে জালিয়াতি করে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতুর সংখ্যক গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে। তৎপর হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।