বিজেপি বিরোধী মহাজোটের সম্ভাবনায় জল ঢালতে লোকসভা ভোটের ঢের আগেই মরিয়া অপারেশনে নেমেছে বিজেপি তথা মোদি সরকারের রাজনৈতিক ম্যানেজাররা। আগামী ৯ আগস্ট রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে বিরোধী ও সরকারপক্ষ উভয় শিবিরই ঝাঁপিয়েছে। এখনও কোনও পক্ষই প্রার্থী ঘোষণা করেনি। শোনা যাচ্ছে, নীতীশ কুমারের দলের হরিবংশ সিংকে প্রার্থী করতে পারে এনডিএ। আবার বিরোধীদের পক্ষে জল্পনা চলছে ডিএমকে এমপি ত্রিচি শিবা এবং এনসিপি এমপি বন্দনা চৌহানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। আর এই নির্বাচনই বস্তুত আগামীদিনের জোট সমীকরণকে স্পষ্ট করবে। এনডিএ এবং বিরোধী জোটের প্রার্থীদের সমর্থনের অঙ্ক দেখেই বোঝা যাবে বিজেপি কাদের আগামীদিনে নিজেদের পাশে পাওয়ার দিকে ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছে। আবার বিরোধী জোটও বার্তা পাবে কাদের সঙ্গে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব।
বিরোধী জোটে ইতিমধ্যেই ফাটল ধরিয়ে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতিকে পাশে নিয়ে আসার পথ প্রশস্ত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির সুপ্রিমো তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটের পর এনডিএ জোটে যেতে তাঁর আপত্তি নেই। গতকাল তিনি দিল্লি এসে মোদির সঙ্গে দেখা করেন। এরপরই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে বিজেপির পরবর্তী জোটসঙ্গী হতে পারে বিজু জনতা দল। আগামী লোকসভা ভোটের পর বাইরে থেকেও তারা সমর্থন জানাতে পারে যদি সংখ্যার প্রয়োজন হয়। বিজু জনতা দলের রাজ্যসভার এমপি প্রসন্ন আচারিয়াকে নিয়ে রীতিমতো টানটানি হয়েছে গত কিছুদিন ধরে। বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নবীন পট্টনায়ক রাজি থাকলে তাঁর দলের প্রসন্ন আচারিয়াকে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করা যেতে পারে। কিন্তু জানা যাচ্ছে বিরোধী জোটের ওই অফারে সায় নেই নবীন পট্টনায়কের। তিনি বিরোধীদের থেকে দূরত্ব রাখতেই আগ্রহী। ওড়িশায় আগামী বছর বিধানসভা ভোট। সেখানে বিজেপির সঙ্গে বিজু জনতা দলেরই লড়াই। তবে আগামী বছরের ভোটে যে ওড়িশা দখল করা সম্ভব সেকথা জানে বিজেপি। তাই ভোটের আগে জোট না করা হলেও লোকসভা ভোটের পর এনডিএ সরকারের জোটে অথবা বাইরে থেকে সমর্থনের জন্য বিজু জনতা দলকে পাশে পাওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। সুতরাং তেলুগু দেশমের পরিবর্তে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতিকে কাছে টানা হচ্ছে। আর বিজু জনতা দল। এআইডিএমকে এবারই লোকসভায় সরাসরি অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারকেই ভোট দিয়েছে। সুতরাং তেলুগু দেশম, মেহবুবা মুফতির জোট ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই দুটি নতুন জোট শরিক প্রায় নিশ্চিত করেছে। আর বিজু জনতা দলকে বিরোধী জোটের থেকে দূরে রাখার প্রাণপণ প্রয়াস করছে। যা সফল বলা যায়। কারণ আজ রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিরোধীদের বৈঠকে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি, বিজু জনতা দল, এ আই ডি এম কে কেউই হাজির হয়নি। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির যে নেতা কিছুদিন আগেই ছিলেন ফেডারেল ফ্রন্টের মুখ, সেই কে চন্দ্রশেখর রাও এবার এনডিএ জোটের দিকে ঝোঁকায় চরম অস্বস্তিতে বিরোধীরা। বস্তুত আদৌ মহাজোটে কারা থাকবেন তা নিয়ে বিরোধী শিবির যথেষ্ট টেনশনে।