১৯শের শুরুতেই ব্রিগেড জমাজমাট। প্রথমে তৃণমূল, তারপর বিজেপি’র সভা। কিন্তু ব্রিগেডে সভা মানেই গত চার দশক যাদের নাম অবশ্যম্ভাবী ছিল, সেই বামেরা কোথায়? তার কী পথ হারালো? একের পর এক ভোটে হেরে বামেদের বড় শরিক সিপিএম এখন ধুঁকছে। আর বাকিদের অবস্থা অস্বিত্ব সংঙ্কটে। দিশা খুঁজে না পেয়ে কর্মীরাও কেউ নাম লিখিয়েছেন রাজ্যের শাসক দলে, তো কেই আবার বিজেপিতে। রোজই নিয়ম করে কর্মী সংখ্যা কমায় ব্রিগেডে সভার নাম শুনলেই এখন ছেঁকা খাওয়ার অবস্থা আলিমুদ্দীনের নেতাদের।
সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত এবং রাজ্যের বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনেই পরিষ্কার বামেদের হারিয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এখন বিজেপি। কার্যত নিশ্চিহ্ণ বামেরা। কর্মী, সমর্থকহীন সিপিএমে এখন ব্রিগেড ভরানোর নাম শুনলেই আঁতকে উঠছেন নেতারা। আড়ালে আবডালে এই যুক্তি মানলেও মুখে অবশ্য তাঁদের সাফাই লোকসভার আগে অর্থের যোগান কম। ব্রিগেড ভরাতে কর্মীদের থাকা খাওার খরচ মেটানোর টেঁকের জোর এখন আর নেই। ফলে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ ব্রিগেডে সমাবেশ করলেও এখনই সেই পরিকল্পনা নেই সূর্যকান্ত মিশ্রদের।
১৯৬৪তে জন্মের পর থেকে এত সঙ্গীন অবস্থা সিপিএমের পক্ককেশধারীদের স্বরণে নেই। তাঁরা তো জানতেন ব্রিগেডে কংগ্রেসের সভা মানেই, তাদের আয়োজন করতে হবে পাল্টা সভার। তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরোধী নেত্রী হিসাবে আন্দোলনের সময়ও এই ধারা বজায় রেখেছিলেন আলিমুদ্দীনের নেতারা। তৃণমূল ক্ষমতা দখলের পরও সিপিএমের বেশ কয়েকবার সভা হয়েছে ব্রিগেডে। কিন্তু রক্তশূন্য সংগঠন নিয়ে সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সুজন চক্রবর্তী, মহম্মদ সেলিমরা।
২০১৪ ‘র লোকসভা ভোটের আগেও ব্রিগেডে সভা করেছিল বামেরা। একই সময়ে কৌ্শলে ব্রিগেড কে ছোট করে প্রধানমন্ত্রীকে এনে সভা করলেও মাঠ ভরাতে ব্যর্থ হয় গেরুয়া শিবির। দলের মধ্যেই গুঞ্জণ, সেবার পারলে, এবার কেন চেষ্টা করা হবে না? ব্রিগেডে সভা না করলে ভোটের আগে জনমানষে ভুল বার্তা যাবে।
পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ, ২০১৪’র তুলনায় ২০১৮’র অবস্থা অনেক পাল্টেছে। সিপিএমের সংগঠনের অবস্থা এখন কঙ্কালসার। জাতীয় রাজনীতিতে দলের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ এ কে গোপালন ভবনের নেতারা। মুখে সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিরোধীতা হলেও মমতার উদ্যোগে প্রস্তাবিত জাতীয় ফেডারেল ফ্রন্টে অংশ নিতেও দ্বিধা আছে তাদের। অবস্থানের দোদুল্যমানতার প্রভাব পড়েছে রাজ্যের সংগঠনে। কর্মীরা দলত্যাগ করে নাম লেখাচ্ছেন তৃণমূল বা বিজেপিতে। ফলে এই অবস্থায় ব্রিগেডে সভা করলে মাঠ ভরানোই দায় হবে আলিমুদ্দীনের। তাই অর্থবলের আভাবের কথা বলেই আপাতত স্বান্তনা জোগাড়ে ব্যস্ত তাঁরা।