ভোটের ফলেই পরিষ্কার বামেদের ভোট ক্রমশ চলে যাচ্ছে বিজেপির ঝুলিতে। রক্তক্ষরণের মাত্রা এতটাই যে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল এখন বিজেপি। পরিস্থতি অনুধাবন করে ২০১৪তেই আলিমুদ্দিনের নেতৃত্বকে সতর্ক করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। গুরুত্বের বদলে মমতা বিরোধীতাতেই সক্রিয় ছিলেন সূর্য, সেলিম, সুজনরা। পরিণাম, নীতি ভ্রষ্ট সিপিএম ছাড়চ্ছেন বহু নেতা। বিজেপি বিরোধীতা করতে তাঁদের ঠিকানা তৃণমূলে। দিশেহারা বাম নেতারা এবার রক্তক্ষরণ ঠেকাতে মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ। বাম নেতাদের মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘তৃণমূলে জোর করে কাউকে আসতে বলছি না। তবে সিপিএম ত্যাগীরা বিজেপিতে যেন না যান সেদিকে নজর রাখতে হবে।’ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ঠেকাতেই এই বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমোর।
বিধানসভায় নিজের চেম্বারে বাম পরিষদীয় দলের একটি ডেপুটেশন পর্বে আলোচনায় বসেছিলেন মমতা। সেখানে বামেরা শাসকদলের বিরুদ্ধে পুলিস নামিয়ে দল বদলের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেন। তা শুনে মুখ্যমন্ত্রী ওই কথা বলেন। সূত্রের খবর বাম পরিষদীয় দলের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠকে হয় মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজ্যে ফড়েদের দৌরাত্ম্যে কৃষকদের হাতে ফসলের ন্যায্য দাম না পৌঁছনো, অন্তত দু’কোটি মানুষের ডিজিটাল রেশন কার্ড না পাওয়া এবং সর্বত্র বিরোধী বিধায়কদের প্রতি প্রশাসনের বঞ্চনা এবং অসহযোগিতা করার ব্যাপারে বামেরা একগুচ্ছ অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ফসলের দাম এবং রেশন কার্ড না পাওয়ার বিষয়টি মমতা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে বৈঠকে ডেকে সমাধান করার জন্য নির্দেশ দেন।
বিধায়ক তহবিলের অর্থ খরচ, গীতাঞ্জলি আবাসন প্রকল্পে গরিবদের গৃহ বণ্টনের টাকা বরাদ্দ, জেলাস্তরে বিভিন্ন সরকারি কমিটির বৈঠকে ডাক না পাওয়া সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধী বিধায়কদের প্রতি বঞ্চনা সংক্রান্ত গুচ্ছ অভিযোগ শুনতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। সব শুনে তিনি সুজনবাবুদের জানান, কোথাও কোনও অসুবিধা হলে তাঁকে সরাসরি যেন জানানো হয়। বিধানসভায় জনস্বার্থবাহী ইস্যুগুলি নিয়ে আলোচনার সুযোগ না পাওয়ার ব্যাপারে বাম বিধায়কদের অভিযোগ নিয়ে তিনি পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বৈঠকের শেষ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বিধায়কদের দলত্যাগের বিষয়টি তোলেন। তখনই মমতা বলেন, ‘আপনাদের দলত্যাগীরা যেন আবার বিজেপি’তে চলে না যান।’
বাম নেতৃত্বের এই আকুতি থেকেই স্পষ্ট আলিমুদ্দীনের দিশাহীনতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যে নেত্রীকে নিশানা করে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছে বামেরা ঠেকায় পড়ে সেই নেত্রীর কাছেই খুঁজছেন সমাধানের পথ।