তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার জনতার অবিসংবাদী নেত্রী। জনতাই তাঁর শক্তি। জনতার ওপরই যে মমতার সম্পূর্ণ আস্থা তা গতকাল আবারও প্রমাণ হল বিধানসভায়।
লোকায়ুক্ত আইন নিয়ে বিরোধীদের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় তিনি জানালেন, ‘ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’ বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আগে আইনটা ভালো করে পড়ুন। মুখ্যমন্ত্রীও লোকায়ুক্তের আওতায় আছেন।’
তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার যে বিরোধীদের নেই, সেটা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘আমি জনগনের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা বন্ধক রেখেছি। মানুষই এর বিচার করেছেন। যাঁদের নিজেদেরই ছিদ্র আছে, তাঁরা কীভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতার বিচার করবেন?’
বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গ লোকায়ুক্ত সংশোধনী বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। বাম ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একাধিক সংশোধনী আনা হয়েছিল। ভোটাভুটিতে তা খারিজ হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজ্যপাল এই সংশোধনী বিলটি অনুমোদন করার ১০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে লোকায়ুক্ত হিসেবে নিযুক্ত করা হবে।’
লোকায়ুক্ত আইনটি সংশোধনের জন্য বিধানসভায় বিল আনার উদ্যোগ নিতেই বিরোধীরা এনিয়ে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলতে শুরু করে। মোট ছ’টি বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। তবে মূল অভিযোগ ছিল, লোকায়ুক্তের আওতার কার্যত বাইরে রাখা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। মন্ত্রী, বিধায়ক, সরকারি আধিকারিক, কর্মচারী সকলের ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের অনুমোদন নিয়ে তদন্ত করতে পারবে লোকায়ুক্ত, এনিয়েই আপত্তি তোলা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিরোধীদের তোলা অভিযোগগুলি খণ্ডন করার পাশাপাশি কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি’কে তুলোধোনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় আইনে যেমন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সহ কয়েকটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, তেমনই এখানে পাবলিক অর্ডারে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। পাবলিক অর্ডার বলতে পুলিস বাহিনী মোতায়েন করা, পুলিসের আধুনিকীকরণ, সরকারের সক্ষমতা গড়ে তোলা ইত্যাদি। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিধায়ক হিসেবে অভিযোগ তোলারও সুযোগ থাকছে। সেক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমোদন নিতে হবে।’ মমতা বলেন, ‘রাজ্য তালিকার ৫৮টি বিষয় যার মধ্যে সেচ, কৃষি, পঞ্চায়েত প্রভৃতি আছে, সেগুলি পাবলিক অর্ডারের মধ্যে পড়বে না।’
এদিন বিধানসভায় সরকারের উপ মুখ্যসচেতক তাপস রায় একটি সংশোধনী আনেন, যাতে পাবলিক অর্ডার বহির্ভূত কোনও বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লোকায়ুক্ত তদন্ত করতে গেলে বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতায় তা পাশ করাতে হবে। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের তদন্তের আওতা থেকে বাইরে রাখার জন্য এটা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিধানসভায় দাবি করেছেন, ‘বাম আমলের লোকায়ুক্ত আইন এবং কেন্দ্রের লোকপাল আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তাঁরা সংশোধনী এনেছেন। কিন্তু দুটি আইনকে পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি। বিরোধীরা কখনও ক্ষমতায় এলে এই আইন ফের সংশোধন করার সুযোগ তো থাকছেই।’
বিধানসভায় শাসক পক্ষের বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকায় তাঁরা ইচ্ছা করলে পাবলিক অর্ডারের বাইরে থাকা বিষয়গুলির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে পুরোপুরি লোকায়ুক্তের আওতার বাইরে নিয়ে আসতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি। শাসকদলের বিধায়কদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে লোকায়ুক্ত তদন্ত করবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
লোকায়ুক্ত ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার ও পূর্বতন বাম সরকারের সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাম সরকারের সময় লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা হলেও কাজ বিশেষ হয়নি। শেষের দিকে ওই পদে কেউ ছিলেন না। বিজেপি বিধায়ক দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীকে লোকায়ুক্তের আওতায় না রাখার জন্য কটাক্ষ করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কেন লোকপাল গঠন করেনি? রাজস্থান সহ অনেকগুলি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এর আওতায় নেই। কেন্দ্র দেরি করায় ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলায় রাজ্যে লোকায়ুক্ত গঠনে দেরি হয়েছে।’
আসলে শুধুই বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা। প্রমাণ হল আবারও। স্পষ্ট হল, বাংলর জনতার অবিসংবাদী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ই।