প্রথম ছবিটা ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাঁক্রোর। কোন পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরে তোলা নয়৷ কোন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের রকেট লঞ্চিং শেষে তোলা নয়। স্রেফ বিশ্ব ফুটবলে কাপ জয়ের মুষ্টিবদ্ধ উল্লাস। ছবিটি তুলেছেন রাশিয়ার TAAS এজেন্সির চিত্রসাংবাদিক এলেক্সেই নিকোলস্কাই। গোটা পৃথিবীতে এই সময় যত জন ছবিটা শেয়ার করেছেন, তার বদলে একটাকা করে ও যদি ওনার পকেটে ঢুকতো, তিন পুরুষ ভলগা নদীর তীরে পায়ের ওপর পা তুলে থেকে যেতেন৷ যাবেন না কারণ এসবের বদলে টাকা আসেনা। সাংবাদিকেরা মারা গেলে মহান হয়। জীবদ্দশায় নাম ও জানতে পারেনা কেউ৷ আমরা অন্তত নাম দিয়ে শেয়ার করতে পারিনা? সৃজনশীলতা কে স্বীকৃতি দিতে তো পয়সা লাগছে না।
দ্বিতীয় ছবিটা ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবল টিমের। যাদের জন্য সাদা চামড়ার রাষ্ট্রপ্রধানের এই উল্লাস৷ লক্ষ্য করে দেখবেন সাতজন কৃষ্ণবর্ণ। আফ্রিকার উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান ছিল এরা প্রত্যেকে।
এদের মা,বাবা, দাদু দিদা ভিটে মাটি ছেড়ে ক্যামারুণ, কংগো, গিনি, মালি, এংগোলা, টোগো প্রভৃতি দেশ থেকে গৃহযুদ্ধ, অনাহার, জাতিদাঙ্গা, মহামারী থেকে বাঁচতে, নতুন স্বপ্নে শান দিতে পালিয়ে এসেছিলো বা গলা ধাক্কা খেয়েছিলো৷ প্রতি রাতে লুকা মদ্রিচ যেরকম আধপেটা খেয়ে রিফিউজি মায়ের পাশে শুয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো বিশ্বকাপে খেলার, এই ছেলেগুলো ও তো একই স্বপ্ন দেখেছিলো। হয়তো অন্য কোন আকাশের নিচে, রিফিউজি ক্যাম্পে।
কিরকম গুলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু? দেশ, কাঁটাতার, সীমান্ত, দেশভাগ, ভিটেমাটি, ফেলে আসা জামরুল গাছ, ও দ্যাশের ফুটবল মাঠ, এদেশের খড়কুটো আঁকড়ে থাকার জেদ।
অর্থাৎ জয়টা ফ্রান্সের না ওই রিফিউজিদেরই হলো শেষমেশ? জয়টা লুকার হলো? ট্রাম্প যাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে বলেছিলো তাদের হলো? রোহিংগার হলো? রাজশাহীর ভিটে ফেলে আসা রাতজাগা ফ্যানের হলো? না গরিষ্ঠবাদকে চার গোল দিয়ে বহুত্ববাদের জয় হলো আজ?
পোগবা, উমতিতি, মাতুইদির মায়েরা নিশ্চই অহনও প্রতি রাত্রে স্বপ্ন দ্যাহে দ্যাশের বাড়ি, বাপের বাসা ফেরার। যেভাবে সারাদিন ঘুইরা নিজের ঘরে ফিরা আসে পাখি। মদ্রিচের বাবা ও হয়তো যুদ্ধ বিধ্বস্ত পাড়ায় বারুদমাখা ধুলো ছুঁয়ে ছেলেবেলার খেলার মাঠ দেখতে পায়।
এমানুয়েল ম্যাঁক্রোর মুষ্টিবদ্ধ উল্লাসটা বোধহয় জয়ের প্রতিচ্ছবি না। পৃথিবী জুরে ভিটেমাটি ছেড়ে আসা, যুদ্ধবাজদের চোখে চোখ রাখা, বহুত্ববাদ আর শান্তির জন্য গলা ফাটানো, কালোর কাঁধে কাঁধ সাদা চামড়ার বিপ্লব ঘটে যাওয়ার। উল্লাসটা নতুন ভোরের। কি আশ্চর্য রুশদেশেই এসব রুপকথা তৈরি হয়৷ লেনিন বলতেও তো একঝলকে ‘ফ্রেঞ্চ’কাটই বুঝি৷ নিছকই সমাপতন। আফ্রি’কাপের’ মতো।
( মতামত ব্যক্তিগত )