আমি যেভাবে খেতে বসি, বা জামা পরি বা চুল আঁছড়াই, ঠিক ওভাবেই বা আর একটু সুন্দর করে থালা গুছিয়ে খেতে বসে, টিপটাপ জামা পড়ে, পাটপাট চুল আঁছড়ায় ও। ব্রাশ টাও আমার চেয়ে মোলায়েম বিজ্ঞাপনী কায়দায় মাজে।
আমরা যেভাবে চুমু খাই, ঠিক ততোটাই উষ্ণতা বা আর একটু বেশি গভীরে ওষ্ঠ ছোঁয় ও। আদর করে, ঠোঁট ভিজিয়ে দেয় ভালোবাসায়। ওর ও সোহাগের রঙ লাল৷ আমার মতোই৷
ধরুন আপনার মাটির সোঁদা গন্ধ, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি ভিজতে ভালো লাগে না। আপনার বিষণ্ণ দুপুর, ঘামের গন্ধ, পিচগলা রোদ্দুর ভালোলাগে। ধানক্ষেতে খালি পা হাঁটতে ভালো লাগে, মায়ের শাড়ীর গন্ধ ভালো লাগে, বোনের কানের দুল ভালোলাগে আবার বাবার সিগারেটের গন্ধ ও মিঠে লাগে। আপনি কি অসুস্থ, ইয়েতি না ছক্কা ?
ধরুন একটা নিতম্বিনী, স্থুলললনা বা কামিনী না, পুরুষ হয়ে আর একটা বেতের মতো ছিপছিপে, সুঠাম, গলার কাছে একটা তিল আছে, এরকম ছেলে পছন্দ আপনার৷ এমন কেউ যে আপনার ব্যক্তিত্বকে জাপ্টে ধরবে নিজের পুরুষত্বের ওমে। ধরুন আপনার মেয়ে হয়ে ও স্বমেহন করতে ভালো লাগে। গোল্লাছুটের মাঠে স্নিকারস পড়ে দৌড়তে ভালো লাগে। পেলব ত্বকের মোলায়েম মেয়েদের গালে ফেটে যাওয়া ঠোঁট ছোঁয়াতে ভালো লাগে। সুগন্ধী লম্বা চুল সরিয়ে কোন নারীর কাঁধে মুখ রাখা সবটুকু চুম্বনের মতো লাগে। আপনি কি অসুস্থ, ইয়েতি না ছক্কা ?
আচ্ছা নাগরিক অভিধানে অসুস্থ হওয়ার যোগ্য কি
তারা যারা গরু, বাছুর নির্বিশেষে যৌনকাজে ব্যবহার করে কামনিবারনে? অসুস্থ তকমা পাবে ওরা, যারা সুখ পেতে একটা গোটা কাঁচের বোতল, লোহার রড, পাথরকুচি যোনিপথে ঢুকিয়ে দিতে পারে পরম তৃপ্তিতে? ওরা তো পুরুষ ছিলো। নারী পেয়েছিল। ক্ষতবিক্ষত হলো কেন তবে মেয়েলি শরীর!
ইয়েতি হিমালয় অঞ্চলের কল্পিত জীব। নিম্নস্তরের এক ধরনের মানুষ বা মানব সদৃশ্য প্রাণী। ইয়েতির মতো সমকামী, উভয়কামী বা বৃহন্নলাদের ও মানুষের মত দ্বিপদ, নিম্নস্তরের এক ধরনের মানুষ বা মানব সদৃশ্য প্রাণী মনে করা হয়। এরা গুঁফো হয়ে ও আরেক গুঁফোকে চুমু খায়। এক কামিজে আরেক সালোয়ার জাপ্টে যায়। স্তন থাকে তবু পুরুষালি খাবি খায় লোকে৷ বিশ্বলোকে। খিল্লি করে লোকে।
সেই লোকে লোকান্তরেই এই বানী ধ্বনিত হয়েছিলো- ও শালা ছ য়ে ছক্কা। ছক্কা অর্থাৎ ব্যঞ্জনবিশেষ, লুচির উপকরণ, ছয়টি ফোঁটাযুক্ত তাস বা স্রেফ যে ব্যক্তির সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি আবেগীয় ও যৌন সম্পর্ক আছে। আসলে স্বেচ্ছায় বাঁচাকে দেগে দেওয়া হোমোফোবিয়ায়।
ওই যে আপনার বন্ধুর সাথে ঘুড়ি ওড়ানোর কাঁধ। ওই যে আপনার খোপ খুঁজে খুঁনসুঁটি। ওই যে খালি গায়ে শুয়ে থাকা তারার দিকে চেয়ে। ওই যে প্রথম বোঝা বন্ধুর চুম্বনের মানে। ওই যে অসহায় চেয়ে থাকা, একলা দম আটকানো দখিনখোলা কাম। এসব তো সমকামেরই এক একটা রামধনু।
পরের বার একটা মেয়েলি পুরুষকে ছক্কা বলার আগে, পুরুষ হয়ে ও নারীত্ব বাসনাকে হোমো বলার আগে, বৃনহন্নলাকে হিজরে বলার আগে খোঁজ করুন আপনার সুস্থতা। আপনি সুস্থ তো পুরুষত্ব প্রমাণ করতে ধর্ষণ করার আগে? আপনার স্ত্রী এই মুহুর্তে না চাইলেও ওকে ঔরস আরোপ করে সন্তানের মা বানিয়ে? নিজের নপুংসকতা ঢাকতে শশুড়বাড়ির সামনে বউকে বেল্টের বারি মেরে শিক্ষা দিতে!
একটা ঋতুপর্ণ ঘোষ, রিকি মার্টিন, করণ জোহারকে তো বিশ্ব চিনবে। আসুন আমরা একটা লক্ষ্মীকান্তপুরের সফিকুলের সাথে মইদুলের প্রেমকাহিনী নিয়ে বলি। আমরা কথা বলি একটা শিউলিকে নিয়ে যে ডালিয়াকে চুমু খেতে চেয়েছিলো। আমরা কথা বলি একটা বাবুকে নিয়ে যাকে ছোটবেলাতেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বৃহন্নলাপট্টিতে, হাততালি দিয়ে পয়সা নেওয়ার তালিম নিতে।
ইয়েতির মতো কাল্পনিক, একগুঁয়ে হচ্ছি সামাজিক আমরা দিনে দিনে। অন্যান্য যা কিছু তা প্রান্তিক, অসুস্থ বা ছক্কা ঠাওড়ে নিচ্ছি। আমরাই কি আসলে ছক্কা না মানসিক-সামাজিক দুর্বলতা থেকে অন্যমতকে অসুস্থতার তকমা দিচ্ছি?
রামধনুতে আরো রোদ্দুর প্রয়োজন । এগিয়ে আসুন। পাশে থাকি আসুন তাদের যারা আর এক ভাবে বাঁচতে চেয়েছিলো। রামধনুতে পাড়ি দিতে চেয়েছিলো।
( মতামত ব্যক্তিগত )