শাসক হোক, বা বিরোধী। পাখির চোখ ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটে ৫৬ ই্ঞ্চির সামনে চ্যালেঞ্জার কে? প্রশ্ন ঘুরছে দেশজুড়ে। নানান জনের নানা মত। জোর তরজা চায়ের ঠেকে, বাসে, ট্রেনে। সবার মুখেই চ্যালেঞ্জার হিসাবে উঠে আসছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
একদিকে লাগাতার কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী বিভিন্ন নীতির বিরোধীতা, অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে একজোট করে ফেডারাল ফ্রন্ট গঠনের প্রয়াস। মূলত এই দুই অস্ত্রেই মোদী সরকারকে দিল্লির মসনদ থেকে সরাতে মরিয়া মমতা।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বেই মোদী মমতা বাক্ যুদ্ধ সুপার হিট। ‘অনুপ্রবেশ’ ইস্যুতে প্রচার পর্বে মোদী বিরোধীতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। ভোটে জিতেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু মমতা কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি, বিজেপির বিভেদের রাজনীতির বিরোধীতা থেকে পিছপা হননি। মোদী অমিত শাহ জুটির বিরোধীতায় সামনের সারিতে নাম মমতার। সিবিআই বা কেন্দ্রীয় সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়েও সুবিধে করতে পারেন গেরুয়া নিশানের ধ্বজাধারীরা। বরং যত চাপ তাঁরা দিয়েছে মমতাকে শায়েস্তা করতে ততই বেড়েছে তার জনপ্রিয়তা। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের ফলাফলই তারই সেরা উদাহরণ।
দিন যত এগিয়েছে মানুষ বুঝতে পেরেছে কালো টাকা ফেরানো, অনুপ্রবেশ বন্ধের মতো প্রতিশ্রুতি আসলে কতটা জোলো। উল্টে নোটবন্দী, জিএসটি সহ নানান কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছেন। কিন্তু সত্যকে ধামাচাপা দিতে প্রচারের বহর বেড়েছে কেন্দ্রের।
২০১৪-র লোকসভার পর থেকে ভাটার টান গেরুয়া শিবিরে। দেশের বিভিন্ন উপনির্বাচনে সাফল্য আসতে শুরু করে বিরোধীদের। জোট বাঁধে মায়া-অখিলেশের মতো যুযুধান নেতা নেত্রীরা। দিল্লি থেকে মোদীকে সরতে এর আগে থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমোর ফর্মুলা ছিল ‘ফেডারাল ফ্রন্টের’। একের বিরুদ্ধে এক লড়াই। সাম্প্রতিক কয়েকটি ভোটে কার্যত সেই পদ্ধতি মেনেই সাফল্য আসে বিরোধীদের।
বিরোধী শক্তিকে একজোট করতে বেশ কয়েকবার রাজধানী ছুটে গেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কথ বলেছেন বিজোপি বিরোধী সব রজনৈতিক দলের সঙ্গে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই সুখকর নয়। তাই টিআরএস,বিজেডি বা টিডিপি, আপ জোটে কংগ্রেসকে রাখতে নিমরাজি। রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা সর্বাত্মক নয়। কিন্তু রাহুল বা কংগ্রেস বিরোধীদের সঙ্গে যেমন সুসম্পর্ক তৃণমূল নেত্রীর তেমন তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা আছে লালু, মায়া, অখিলেশদের কাছে। তাই বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেতে ‘স্বাভাবিক পছন্দ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বিরোধী শিবিরের ফাঁকফোকর ভরাটের কাণ্ডারি।
একদিকে কেন্দ্র বিরোধীতায় মমতার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। অন্যদিকে আবার বিরোধী শিবিরেও তিনি নেতৃত্ব প্রর্যায়ে রয়েছেন তাঁর ভূমিকার জন্য। সব মিলিয়ে তাই মোদীর চ্যালেঞ্জার মমতাই। হরিশ মুখার্জী রোডের বাসিন্দার নামেই এখন সিদুঁর মেঘ দেখছেন মোজী শাহ জুটি।