রাজ্যরাজনীতির পালা বদলের অন্যতম কারণ নন্দীগ্রাম। সেই নন্দীগ্রাম নিখোঁজকাণ্ডের তদন্তে তৎপর হলো সিআইডি। লক্ষ্মণ শেঠ, তপন ঘোষ, সুকুর আলি সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ সহ একাধিক ধারায় রুজু হওয়া মামলার তদন্ত শুরু করল তারা।
নিখোঁজ দুর্গাপদ মাইতি ও সুব্রত সামন্তের পরিবার ফের তদন্ত চেয়ে আদালতে মামলা করে। তারই তদন্তভার হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকারের এই তদন্তকারী সংস্থা। এর আগে সিবিআই নন্দীগ্রামের নিখোঁজ মামলা সহ পুলিসের গুলিচালনার ঘটনার তদন্ত করে। আদালত রাজ্যকে ফের তদন্তভার দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া বড়সড় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াল।
২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের উপর পুলিস ও সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৩ জনকে শনাক্ত করা গেলেও একজনকে করা যায়নি। এছাড়াও এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এই নিয়ে উত্তপ্ত হয় রাজ্য-রাজনীতি। সেই সময়কার বাম সরকারের নির্দেশে প্রথমে সিআইডি এর তদন্ত শুরু করে। পরে আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্তভার নেয়। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চালালেও নিখোঁজদের কাউকেই খুঁজে বের করতে পারেনি। যার মধ্যে অন্যতম দুর্গাপদ মাইতি ও সুব্রত সামন্ত। তাঁরাও ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। তাঁরা জীবিত না মৃত, তা নিয়েও কোনও তথ্য নেই সিবিআইয়ের কাছে।
স্বাভাবিকভাবেই এই তদন্তে খুশি নয় তাঁদের পরিবার। দুর্গাপদ মাইতির স্ত্রী কিছুদিন আগে হলদিয়া আদালতে আবেদন করেন, তাঁরা পুনরায় তদন্ত চান। আদালতে পেশ করা পিটিশনে সুব্রত সামন্তরও নাম ছিল। আদালত তাঁদের বক্তব্য শোনার পর জেলা পুলিসকে এর তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। সেইমতো অপহরণ, খুন সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয় চলতি বছরের মার্চে। তারপরই জেলা পুলিসের কাছ থেকে এর তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি । তাতে একসময়ে পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের প্রভাবশালী নেতা লক্ষ্মণ শেঠ, অশোক গুড়িয়া, প্রজাপতি দাস সহ মোট ১৫ জনের নাম রয়েছে।
তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরই তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। জানা যায়, ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনকে ভেঙে দিতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁরা। গুলি চালানোর দিন এঁরা সকলেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। অফিসারদের দাবি, এই দুই সদস্যকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ শেঠ সহ অন্যান্য নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাঁদের জেরা করলেই এই দুজনের বিরুদ্ধে তথ্য মিলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
খুব শীঘ্রই তাঁদের জেরার জন্য ডাকা হবে বলে খবর। পাশাপাশি দুই পরিবারের সদস্যদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। সিআইডি তদন্ত হাতে নেওয়ায় বেকায়দায় লক্ষ্মণ শেঠ। অস্বস্তিতে সিপিএম।