দু নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর বর্ধমান থেকে আসানসোলের দিকে এগোতে থাকলে, মাইলফলক দেখে বোঝার উপায় নেই কোন রাজ্য এটা! মাইলফলক ও সাইনবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে হিন্দি ও ইংরেজি। দু একটা জায়গায় হয়ত বাংলা ভাগ্যক্রমে ঠাঁই পেয়েছে। অথচ রাজ্যটা পশ্চিমবঙ্গ, ভাষার ভিত্তিতে তৈরি একটি রাজ্য, ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ‘ক্যাটেগোরি সি’ রাজ্য।
১৯৬৮ সালে ভারত সরকার ত্রিভাষা নীতি গ্রহণ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে। বাকি সমস্ত দপ্তরও এই নীতি গ্রহণ করে। জাতীয় সড়কের মাইলফলকে হিন্দি এবং ইংরেজির সাথে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মূল সরকারি ভাষা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু তামিলনাড়ু ত্রিভাষা নীতিও মানে না, সৌজন্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আন্নাদুরাই। তামিলনাড়ুতে জাতীয় সড়কের মাইলফলকে শুধুমাত্র তামিল এবং ইংরেজি আছে, হিন্দি নেই। পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশাতেও জাতীয় সড়কে সগৌরবে উপস্থিত ওড়িয়া ভাষা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এর অন্যথা কেন? পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় সড়কের মাইলফলকে বাংলা না থাকাই অন্যায্য।
অসুবিধায় পড়ছেন পথচলতি বাঙালিরা। পশ্চিমবঙ্গে ৮১ শতাংশ বাঙালি, ৮৩% বাঙালি অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না। বাঙালির প্রতি এই বঞ্চনার ফলে ক্ষোভ বাড়ছে এ রাজ্যের মানুষের। বারবার শিরোনামে আসছে জাতীয় সড়কে বাংলা বোর্ডে লাগানোর দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনা। এ ব্যাপারে ‘বাংলা পক্ষ’ নামের এক সংগঠন প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। গত ১৩ ই জুন, বাংলা পক্ষের পশ্চিম বর্ধমান শাখা রাণীগঞ্জের পাঞ্জাবী মোড়ে প্রতীকী বাংলা বোর্ড লাগিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং ১৪ তারিখ দুর্গাপুরে ন্যাশানাল হাইওয়ের অফিসে স্মারকলিপি জমা দেন সংগঠনের সদস্যরা। জোর প্রচার চলছে সামাজিক গণমাধ্যমেও। বাংলা পক্ষের পশ্চিম বর্ধমান শাখার মূল সংগঠক বাপ্পা দে জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সবকটি জাতীয় সড়কের মাইলফলকে বাংলা থাকতে হবে। বাংলা ও বাঙালির প্রতি বঞ্চনা আমরা মানব না। আমাদের অন্য কোনো ভাষার প্রতি বিদ্বেষ নেই। আমরা বাংলার ন্যায্য অধিকার চাই’।
এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পাওয়া গেলেও, মেলেনি কোনো সময়সীমা। বাংলা পক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা জানান, ‘লড়াই চলবে। এটা ন্যায্য দাবী। বাঙালির এই অধিকার আদায় করেই ছাড়ব। আমরা লড়াইয়ে আছি। সমস্ত মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসও চলবে ‘। সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ, বাংলার অনুপস্থিতিতে। এবার চোখ রাখতে হবে কর্তৃপক্ষ কি পদক্ষেপ নেয় সেদিকে।