এক পেট খিদে আর মানিব্যাগ থেকে একশো টাকার একখানা নোট নিয়ে স্টেশনের পাশে ঝা চকচকে মিষ্টির দোকানে ঢুকলাম। রাধাবল্লবি আর আলুর দম অর্ডার দিলাম। চারপাশে হরেক মিষ্টি, আম দই, রসভরা, রসরাজ স্থবির হয়ে অপেক্ষায়।
এক বৃদ্ধ, ষাটের কাছাকাছি নোংরা জামা আর কাপড় এর ঝোলা কাঁধে ঢুকে একটা প্রাগৈতিহাসিক ফোন বার করলো। জটিল অঙ্ক কষে কোন একটা নাম্বার থেকে আসা কল ধরলো।
“হ্যা, নিয়ে আসছি। সবার বাদ দাও। হ্যা দাদুভাই এর জন্যই শুধু।”
মেপে মেপে কথা বলে, ফোন রাখলো এবং এক এক করে সমস্ত মিষ্টির দাম জিজ্ঞেস করলো।
সবকিছুই দশ করে। বৃদ্ধের মুখে চিন্তা জমাট বেঁধে আছে। আমি পরবর্তী মুহূর্তের অপেক্ষায়।
জরাজীর্ণ জামার বুক পকেট হাতরে দুটো দশটাকার নোট বের করলো। সযত্নে রক্ষিত দুটো ততোধিক জীর্ণ, ঘেমো, নোংরা নোট।
খুব আস্তে কুন্ঠিত কন্ঠে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো, গুজিয়া আছে?
গুজিয়ার দাম দুটাকা এখানে। দশটা কুড়ি টাকা।
দোকানদার এক বাক্সে পুরে দিলো দশটা স্বপ্নের গুজিয়া। ভদ্রলোক গুজিয়া সযত্নে নিয়ে ট্রেনের জন্য রওনা হলো।
মিষ্টির দোকানে তখনও স্থবির হয়ে থাকা মিষ্টি, আমার আধখাওয়া রাধাবল্লবি প্লেটে। ওটার ও দাম দশটাকা।
গুজিয়াগুলো ছোট তবে মজার হয়। ওর আকর্ষণ অন্য মাত্রায়। ছোটবেলায় আমার নিম্নবিত্ত দাদু ও আমার জন্য গুজিয়া আনতো ঘেমেচুমে। প্যাকেট খুললেই একগুচ্ছ মজার মিষ্টি।
এখন স্বপ্নগুলো কয়েকশো গুণ লম্বা, মিষ্টি ও হতে হয় ইয়া বড়। বাকিটা অনু পরিবারের আলাদা হাঁড়ি, রোজ উবের এ না যেতে পারা, নতুন সিরিজের আই ফোনটি না কিনতে পারার এক রাস দারিদ্র্য-নামা।
আজ আর গুজিয়া রোচেনা মুখে। যেরকম ওই বৃদ্ধের দাদুভাই ও আর কয়েকবছর পর একাই পঞ্চাশ টাকার রাধাবল্লবি, আলুর দম, রসমালাই আর শেষে মাজা খেয়ে উড়িয়ে দেবে।
পঞ্চাশ টাকা ঠিক কতটা আনন্দ কিনতে পারে?
ট্রেন এর দরজার পাশে ঝোলার মধ্যে গুজিয়া। ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে।