নতুন প্রজন্মকে ব্যবসামুখী করতে অনেকটাই সাফল্য পেল পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায় তাক লাগিয়েছে এ রাজ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছোট ব্যবসায় যে মুদ্রা যোজনা চালু করেছেন, সেই নিরিখেই এ রাজ্যের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। হিসেব বলছে, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে এ রাজ্যে মাঝারি মাপের ব্যবসায় ঋণ নিয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৫৭ জন। ঠিক এক বছর পরে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২০৮। এ তো গেল ঋণগ্রহীতার সংখ্যা। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে যেখানে প্রায় ২ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়েছিল, সেখানে পরের বছর তা বেড়ে হয় প্রায় ৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। মুদ্রা যোজনায় এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে এক বছরে এতটা বৃদ্ধি অন্য কোথাও হয়নি, বলছে কেন্দ্র।
মুদ্রা যোজনায় বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে যে ঋণ দেওয়া হয়, তা তিন ভাগে বিভক্ত। ৫০ হাজার টাকার কম অঙ্কে ঋণ নিলে, তার পোশাকি নাম ‘শিশু’। পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ হলে, তার নাম ‘কিশোর’। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের বহর হলে তাকে ডাকা হয় ‘তরুণ’ নামে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, যাঁরা ‘শিশু’ তকমায় ঋণ পান, টাকার অঙ্কের নিরিখেই ধরে নেওয়া যেতে পারে প্রথমবার ব্যবসার জন্যই তাঁরা পুঁজি সংগ্রহ করছেন। এই বিশেষ খাতে গত কয়েক বছর ধরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। গত আর্থিক বছরেও এ রাজ্যের স্থান তামিলনাড়ুর ঠিক পরেই। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ঋণ, অর্থাৎ ‘কিশোর’ বিভাগে ঋণে গত কয়েক বছরে তেমন সাফল্য দেখা যায়নি পশ্চিমবঙ্গে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে শুরু হয় মুদ্রা যোজনা। সেবার পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের অনুমোদন জোটে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৯২৭ জনের। সেবার ঋণের অঙ্ক ছিল ২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এক বছর পরে ঋণ পাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির হার ১০৫ শতাংশ হয়। তার পরের বছর, অর্থাৎ গত আর্থিক বছরে সেই বৃদ্ধিই ৩৪৮ শতাংশে পৌঁছয়।
এখানে বড় শিল্প নেই। চাকরির বাজারেও মন্দা। ছোট শিল্পই যে ভবিষ্যৎ, তা একাধিকবার বুঝিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চাকরির জন্য হাপিত্যেশ না করে, চপ-মুড়ি শিল্পের তত্ত্ব খাড়া করেছেন তিনি। বলেছেন, ছোট শিল্প আমাদের ভব্যিষ্যৎ, দেশের ভবিষ্যৎ। তাই চাকরির চিন্তা ছেড়ে ব্যবসা করুন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই তেলেভাজা ব্যবসার পরামর্শকে বিরোধীরা খোঁচা দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অর্থনীতিবিদদেরই একাংশ বলেছেন, ছোট শিল্পের বহর বাড়লে, তা যে কোনও এলাকার অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে অনায়াসে। রাজনৈতিকভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পূর্ণ উল্টো দিকে থাকা নরেন্দ্র মোদিও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশজুড়ে সেই ছোট শিল্পের বা ব্যাবসার বহর বাড়ানোর বিষয়েই সওয়াল করেছেন। সিলমোহর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বে। শুধু মৌখিক বার্তা নয়। তিনি ছোট ব্যবসার পুঁজি জোগানোর জন্য খুলেছেন আলাদা একটি সরকারি প্রকল্প। চালু হওয়া সেই প্রকল্পের পুরো নাম ‘মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনান্স এজেন্সি লিমিটেড’ বা মুদ্রা। ক্ষুদ্রশিল্পে পুঁজি জোগানো প্রকল্পটি সরকারি ভাষায় প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা হিসেবেই পরিচিত। প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রকল্পেই তাক লাগিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, পাঁচ লাখ টাকার নীচে ঋণ নিলে, তা দিয়ে ছোট ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু সেই উদ্যোগে যে রাজ্য সরকার বেকারদের শামিল করতে পারছে, এই সাফল্য হেলাফেলার নয়। কারণ, রোজগারের জন্য স্বাধীন ব্যবসার বীজ এখন বোনা শুরু হলে, তার সাফল্য অচিরেই ফলবে রাজ্যে। চাকরির চিন্তা ছেড়ে স্বাবলম্বনের হাত ধরে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বেশি সময় লাগবে না।