রাজ্যে যে দ্রুতগতিতে পরিকাঠামো তৈরির কাজ হয়েছে, তাতে শিল্পে লগ্নি টানার পথ আরও সুগম হবে। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই আশা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে রাজ্যের শিল্পায়নকে লক্ষ্য রেখে চীন সফরের যাচ্ছেন তিনি। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিদেশ সফরের প্রাক্কালে বাংলার শিল্পবান্ধব পরিবেশ সম্পর্কে বার্তা দিতেই পরিকাঠামো উন্নয়নে গত সাত বছরে রাজ্যের আগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি।
বাম আমলে রাজ্যে শিল্পে খরার সূত্রপাত। একদিকে বন্ধ কলকারখানার সংখ্যাবৃদ্ধি, অন্যদিকে শাসকদলের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের জেরে শিল্পলগ্নি মুখ ফিরিয়েছিল বাংলা থেকে। বাম সরকার শেষদিকে রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে স্লোগান দিয়েছিল, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু শিল্পায়নের উদ্দেশ্যে জোর করে কৃষিজমি দখলকেই প্রধান লক্ষ্য করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু রাজ্যে শিল্প স্থাপনের অন্যতম পূর্বশর্ত যে পরিকাঠামো উন্নয়ন, সেদিকে কোনও নজর দেয়নি তারা। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেই রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যপূরণে নজর দেন মমতা। তাই দীর্ঘদিনের অবহেলিত পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। রাস্তা সম্প্রসারণ, গ্রামীণ সড়ক তৈরি, সেতু ও উড়ালপুল নির্মাণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। নগরায়নের পাশাপাশি গ্রামীণ পরিকাঠামো সম্প্রসারণে জোর দেয় প্রশাসন। ফলে গ্রাম ও শহরে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ সুনিশ্চিত হয়েছে। সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণেও দ্রুত সাফল্য এনেছে তৃণমূল সরকার। সব মিলিয়ে রাজ্যের এই সার্বিক উন্নয়ন লগ্নি আকর্ষণের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে বলেই মনে করেন মমতা।
এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পরিকাঠামো উন্নয়নের স্বপক্ষে নিজের সরকারের তৎপরতার কথা উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন পরিকাঠামো তৈরিতে ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে তাঁর প্রশাসন। চলতি আর্থিক বছরের রাজ্য বাজেটে এই খাতে ২৫ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। মমতার দাবি, ওই বাজেট বরাদ্দের বাইরে পরিকাঠামো উন্নয়নে নতুন প্রকল্পগুলির জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজেও বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। অন্যদিকে, রাস্তাঘাট থেকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উন্নতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশের পথ প্রশস্ত হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে প্রতি বছর বাংলায় শিল্প সম্মেলন করে ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া জাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্য-রাজনীতিতে শাসকদলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকেই এখন প্রাধান্য দিচ্ছেন মমতা। তাঁর মতে, কৃষি ও শিল্পের মধ্যে কোনও বিরোধ নয়। দুইয়ের মধে সমন্বয় গড়ে তুলতে চান তিনি। শিল্পে লগ্নি টানতেই তিনি এবার চীন পাড়ি দিচ্ছেন। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের পরিকাঠামো সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেছেন। এই পরিবেশ বিপুল পরিমাণ পুঁজি আকর্ষণের বাস্তবতা সৃষ্টি করবে বলেই মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিল্পায়নের হাত ধরেই নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।