উপনির্বাচনের ফলাফলে বেকায়দায় বিজেপি। প্রায় গোটা বিরোধী পক্ষ এক হয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। তার জেরে উপনির্বাচনে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে মোদী-শাহ ব্রিগেড। এবার ধাক্কা ভিতর থেকেও। বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে একাধিক শরিক।
২০১৪ তে বিজেপি ছিল একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। সরকার টিকিয়ে রাখতে কোনও শরিকের উপরে নির্ভর করতে হত বিজেপি-কে। ২০১৪ সালে সরকার গঠন করার সময়ে এই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজেপির ‘প্লাস পয়েন্ট’ ছিল। চার বছর কাটিয়ে সেটাই ‘মাইনাস পয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার ‘দর্পে’ এনডিএ-র অন্য শরিকদের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি, এমন গুঞ্জন এনডিএ-র অন্দরে ছিলই। কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে যে সাফল্য বিজেপি পাচ্ছিল, তার দিকে তাকিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছিল শরিক দলগুলো। হাওয়া ঘোরার ইঙ্গিত মিলতেই বিজেপিকে দুষতে শুরু করে দিলেন একাধিক শরিক নেত। বড় শরিকের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা, হারের দায় বিজেপির ঘাড়েই চাপাতে শুরু করলেন তাঁরা। বিহারে বিজেপি বড় শরিক নয়, বড় নীতীশ কুমারের দল জেডি(ইউ)। আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন নীতীশ। কিন্তু সরকার গঠনের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জোট ভেঙে দিয়ে নীতীশ এনডিএ-তে সামিল হন এবং বিজেপি-কে সঙ্গে নিয়ে বিহারে নতুন সরকার গড়েন। এই ‘ডিগবাজির’ পরেনীতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিয়েছে আরজেডি-কংগ্রেস। নীতীশের ভাবমূর্তিতে বেশ আঘাত লেগেছে। কিন্তু বিজেপির হাত ধরার জন্য এত বড় মূল্য চুকিয়েও এনডিএ-তে উপযুক্ত গুরুত্ব পাচ্ছেন না নীতীশ কুমার। গুঞ্জন ছিল জেডি(ইউ)-এর অন্দরে। উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হতেই মুখ খুলল জেডি(ইউ)। নানা কারণে দেশে ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষোভ’ তৈরি হয়েছে, বিজেপি সে ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই পারেনি। এমনই মন্তব্য করা হয়েছে জেডি(ইউ)-এর তরফে।বিহারের একটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল এই দফায়। সেই জোকিহাট আসনে এনডিএ-র তরফ থেকে জেডি(ইউ) প্রার্থী দিয়েছিল। সে প্রার্থী হেরেছেন। জিতেছে লালুর দল আরজেডি।এই পরাজয়ের দায় বিজেপির উপরেই চাপাতে শুরু করেছে জেডি(ইউ)। উপনির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র ধাক্কা খাওয়ার অন্যতম কারণ হল পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। বলছেনজেডি(ইউ) নেতারা।
শুধু নীতীশের দল নয়, বিহারে বিজেপির আর এক শরিক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টিও (আরএলএসপি) বড় শরিকের সমালোচনায় সরব হয়েছে। নীতীশের দল তা-ও কিছুটা রেখেঢেকে সমালোচনা করেছে। আরএলএসপি-র আক্রমণে কিন্তুকোনও রাখঢাক নেই। সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যের অভিযোগ তুলেছে তারা।
শরিকি অসন্তোষ বিজেপি কিভাবে সামাল দেয় তার দিকে দেশের রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে আছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অনেকে বলছেন শরিকদের কেউ কেউ ডুবন্ত জাহাজ ছাড়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।