এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরনে মরিয়া কেন্দ্রীয় সরকার। অনেক দিন ধরেই। এ ক্ষত্রেও জোর ধাক্কা খেতে চলেছে মোদী সরকার। কেউ কিনতে রাজি নই এয়ার ইন্ডিয়া। মেলেনি কোনও দরপত্র।
দেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৬ শতাংশ অংশীদারি কেনার জন্য আবেদনপত্র পাঠানোর শেষ তারিখ ছিল ৩১ মে। গত ১ মে এই ডেডলাইন বাড়িয়ে ৩১ মে করা হয়। তার পরেও একটা আবেদন পত্র পাওয়া গেল না। অথচ এই এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির কথা ঘোষণা করার সময়ে কতই না আশা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ভাবা হয়েছিল, এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করে ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে চাঙ্গা করা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি। দেশ বিদেশের কর্পোরেট সংস্থার কাছে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে মোদীর ‘বিকাশপুরুষ’ ইমেজ। বিরোধীরাও পিছিয়ে ছিলেন না মোটেও। বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে চিরাচরিত যুক্তিগুলো দিয়েই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরাও। কিন্তু সেই সব আশা-নিরাশা, রাজনৈতিক তরজা শেষ পর্যন্ত অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হল। সরকার ঠিক করেছিল, বিক্রি করে দেওয়া হবে এয়ার ইন্ডিয়ার ৭৬ শতাংশ অংশীদারি। সেই সঙ্গে শাখা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। নিতে হবে সংস্থার অর্ধেক গ্রাউন্ড স্টাফের দায়ভারও। এয়ার ইন্ডিয়ার ৫৪ হাজার কোটি টাকার মোট ঋণের মধ্যে ৩৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার দায়ভারও নিতে হবে। সংস্থার সমস্ত কর্মীদের অন্তত এক বছর রাখতেও হবে। প্রথমে এয়ার ইন্ডিয়া কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছিল ইন্ডিগো, জ়েট এয়ার ওয়েজ়-এর মতো সংস্থাগুলি।
ইন্ডিগো চেয়েছিল শুধু এয়ার ইন্ডিয়ার বিদেশি ব্যবসা কিনে নিতে। কিন্তু আপত্তি জানিয়েছিল কেন্দ্র। বলেছিল, এয়ার ইন্ডিয়ার অংশীদারি আলাদা করে বিক্রি করা হবে না। ইন্ডিগো কিছু দিন পরই পিছিয়ে যায়।জ়েট এয়ারওয়েজ়ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তার ঠিক চার দিন পরেই। নিজেদের বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেয় জ়েট।এক সময়ে শোনা গিয়েছিল টাটা সন্সের নামও। তাঁদেরও বিন্দুমাত্র হেলদোল দেখা গেল না।সূত্র অনুসারে জানা যাচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়ার অংশীদারি কেনার ব্যাপারে প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়েছিল ১৬০টি সংস্থা। কিন্তু তার পরে কেউই আর এগোয়নি। অথচ বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে রইল কেন্দ্রীয় সরকার। কিছুতেই এই অংশীদারিত্ব বিক্রি করার শর্ত বদলাবে না তারা। এমনিতে ভারতের বিমান পরিষেবার বৃদ্ধি বিশ্বের অন্যতম সেরা। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বা এমিরেটসের মতো সংস্থা এয়ারইন্ডিয়াকে হারিয়ে ক্রমশ থাবা বাড়িয়েছে এইদেশের বিমান-পরিষেবা বাজারের দিকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির শহরেও ক্রমশ পৌঁছেযাচ্ছে বিমানের নাগাল।
অথচ ২০০৭ সালে সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরেও একবারও লাভের মুখ দেখেনি এয়ার ইন্ডিয়া।এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ে একটাও আবেদন পত্র না পাওয়ার পর এখন মুখ শুকনো সকলের। বিলগ্নীকরণ নিয়ে কোথায় বুক ফোলাবেন নরেন্দ্র মোদী, সকলকে বার্তা দেবেন নিজের সংস্কারপন্থী উদার রূপের। তা নয়, উলটে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে প্রশ্ন উঠে গেল তাঁর ভাবমূর্তি নিয়েই।