গত শতাব্দীর নয়ের দশক থেকে বেদান্তর স্টারলাইট কপারের ইতিহাস আসলে আম জনতার সঙ্গে তামিলনাডু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস।
এনভেরনমেন্ট ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট হওয়ার আগেই স্টারলাইট কারখানা বানানোর অনুমতি পেয়ে গেছিল। ভাবা যায়!
মান্নার উপসাগরের তটভূমি থেকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব না হ’লে কোনো কারখানারই অনুমতি পাওয়ার কথা নয়, অথচ মাত্র ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে হওয়া সত্বেও অনুমতি মিলেছিল স্টারলাইট কপারের।
তুতিকোরিনের আগে নাগপুরে ছিল কারখানা। মানুষের চাপে সরকার বাধ্য হয়েছিল সেটিকে বন্ধ করে দিতে স্টারলাইটকে বাধ্য করতে। কিন্তু, তামিলনাডু সরকার ও কেন্দ্রের পরিবেশ মন্ত্রক অস্বাভাবিক দ্রুততায় তুতিকোরিনে কারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয় স্টারলাইটকে।
কারখানার পাশে কখনো তামিলনাডু বিদ্যুৎ নিগমের কর্মীরা কখনো বা শুখনো ফুলের কারখানার কর্মীরা স্টারলাইট কারখানা থেকে বেরোনো গ্যাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে। একাধিকবার গ্যাস লিক্ হয়ে দূষণ ছড়ায় পার্শবর্তী অঞ্চলে। মাটিতে ও জলে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়তে থাকে আর্সেনিক, তামা, এ্যালুমিনিয়মের মতো ধাতু দূষণ। বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে দূষণের ফলে। ন্যায়ালয় একবার বন্ধ করে দেয় কারখানা। কিন্তু মাত্র দিন কয়েকের মধ্যেই খুলেও যায় সেটি। সর্বোচ্চ আদালতে মামলা গড়ায়। সেখানে স্টারলাইটের বিরুদ্ধে অভিযোগ মান্যতা পায়।
তবে কারখানা বন্ধ না রেখে সরকারের কাছে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। যদিও সেই অর্থের একটা টাকাও দূষণে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসায় বা ক্ষতিপূরণে ব্যবহৃত হয় নি। নিহতদের পরিবার পিছু তামিলনাডু সরকার যে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সেটা ওই টাকা থেকে দেওয়া হচ্ছে কি না তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে.
ইতিমধ্যে প্ল্যান্ট বাড়ানোর দিকে নজর দেয় স্টারলাইট্। বর্তমানে কর্পোরেট স্বার্থবাহী কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একদা বিহারের স্ক্র্যাপ লোহার ডিলার, বর্তমানে প্রায় ২০০০ কোটির মালিক লন্ডন কেন্দ্রিক বেদান্ত কর্পোরেশনের কর্ণধার অনিল অগ্রবালের সঙ্গে মোদী সরকার ও স্বয়ং মোদী জীর সম্পর্ক যে কতখানি মধুর তা সবাই জানে।
গতকাল এর ভয়ঙ্কর ঘটনা বহু অপ্রিয় সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে।