‘নেশন স্টেট’ বড় কঠিন শব্দ। গভীর শব্দ। মায়ামমতাহীন দৃঢ় শব্দ। এই যে এত্ত বড় একটা দেশ দিব্যি চলছে, এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে- এটা কি কেবল আপনি একদিন ভোট দিচ্ছেন বলে বা ট্যাক্স ঠিক সময় দেন বলে? নাকি সরকার কে সমর্থন করে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলেন বা পাকিস্তানকে ঘেন্না করেন বলে?
ভারতবর্ষ নামক যে রাষ্ট্র বা নেশন স্টেট অক্ষত আছে, সেটা কেবল ক্ষেতে কিষাণ, কলে মজুর কাজ করছে বলে অক্ষত নেই। ডাক্তার ডাক্তারি করছে বলে অক্ষত নেই, সাংবাদিক লিখছে বলে অক্ষত নেই। শুধু নেতার ভাষণ দিয়েই একটা রাষ্ট্র যন্ত্র সচল থাকেনা । এই প্রকান্ড যন্ত্র সচল রাখতে কিছু স্বার্থহীন পেশাদার দিনরাত কাজ করে যায়। তার বিনিময়ে বেতন পায়। এদের নামে জয়ধ্বনি হয় না, কারণ রাষ্ট্রীয় খাতায় কলমে এদের কোন উল্লেখ থাকেনা। মৃত্যু হলে পরমবীর চক্র পায় না রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে।
গোটা পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রের মত আমাদেরও গুপ্তচর সংস্থা, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, গুপ্তচর, ফরেন হ্যান্ডলার, পড়শি মুলুকে খোঁচড় পুষতে হয়। এদের নিয়ে গোটা বিশ্বে অনেক রুদ্ধশ্বাস উপন্যাস বা ডকু ছবি ইদানীং হচ্ছে। নেটেও সিআইএ, মোসাদ, র, এমআই ৫, কেজিবি র মত সংস্থা গুলো নিয়ে অনেক গল্প চাউর আছে। এদের কাজ নিরলস তথ্য প্রদান করে যাওয়া। কে কখন কি কেন কবে করছে, খাচ্ছে, মিশছে, বসছে, হাসছে, বলছে- সববব জানা চাই রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতে।
এই সুরক্ষিত রাখার কাজ যাদের, তারা কিন্তু নিযুক্ত হচ্ছে আমার আপনার বাড়ি থেকেই। ওই যে র-এর যে অফিসার পাশের রাষ্ট্রনায়কের সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য জানার কাজ করেন, বাস্তব জীবনে কিন্তু তিনি আমার আপনার মতোই নিপাট মধ্যবিত্ত। দরদাম করে দিল্লির বাজারে ভিন্ডি কেনেন, বউ এর হাতের রাজমা ভালোবাসেন। কিংবা বিদেশমন্ত্রকের যে এজেন্ট পাকিস্তানে নিযুক্ত, তিনি মোটেই সলমান খানের মত দেখতে নন। গুলিও ওভাবে প্রকাশ্যে চালান না। শান্ত এবং খুবই সাধারণ ভাবে সে সমস্ত অকুস্থলে দাঁড়িয়ে থাকেন যেখানে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়, বা যখন পথ দুর্ঘটনায় কোন উচ্চপদস্থ কেউ মারা যান বা গ্যাস লিক হয়ে অগ্নিকান্ড হয় কোন সরকারি দপ্তরে।
এই বেনামি রাষ্ট্রীয় চাকুরেদের নিয়েই বানানো ছবি, ‘রাজি’- যাদের জন্য কোথাও কোন ফলক নেই, কোন অমর জওয়ান জ্যোতি কোথাও জ্বলেনা এদের জন্য, কেউ বলে না পরোসি মুলুক মে হমারে স্পাই মর রহে হে। স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা গুপ্তচরকে নিয়ে বানানো ছবি। ঘটনাচক্রে তিনি ছিলেন এক কাশ্মীরি মুসলমান। সেহমত খান। ওদের পরিবার ভারতকে বেছে নিয়েছিলেন ঘর বলে। হয়তো জানতেন না ৭০ বছর পর ওদেরই কারোকে প্রমাণ দিতে হবে দেশাত্মবোধের।
ছবির গল্প টানটান। মেঘনা গুলজার ‘তলওয়ার’ বানানোর পর এটা বানালেন। এটা আরো ভালো। গুলজার সাহেবের শব্দ আর শংকর মহাদেবনের সুর বেঁধে রেখেছে গোটা ছবি। এই সময়ের ভারত কাঁপানো শিল্প নির্দেশক, আমাগো ঘরের ছেলে অমিত রায় ও সুব্রত চক্রবর্তী এখানেও ছাপ ফেলে গেছেন।
জিনে অভিনয় নিয়ে জন্মেছেন আলিয়া ভট। সবচেয়ে খারাপ অভিনয় ও বাকি নায়িকাদের সম্মিলিত চেষ্টার থেকে কয়েকশো গুন ভালো। ওর বর যে হয়েছে -ভিকি কৌশল সেও খুব ভালো। দেখে আসুন। এই মেয়ের গল্প।
শেষে একটা কথা বলতেই হয়। যেহেতু আমি আপনি আমরা সবাই একটা নেশন স্টেট-এর অংশ, আমাদের রাগ হয়। আমাদের রাগ হয় যখন আমাদের দেশের পতাকা প্রকাশ্য রাস্তায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আমাদের রাগ হয় যখন ভারতকে খন্ড খন্ড করার কথা ভাবে মেধাবী ছাত্র, আমার রাগ হয় যখন পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকে যুবক জাতীয় সংগীত চলাকালীন। আমার রাগ হয় কারণ এই দেশটা আমারও। দেশকে ভালোবাসলে উগ্র জাতীয়তাবাদী হয়না লোকে। রাষ্ট্রের জন্য জান লড়িয়ে দিলেই মৌলবাদী, সাম্রাজ্যবাদী হয়ে যেতে হয় না।
মাথায় রাখবেন, দুনিয়া কাঁপানো দশদিন কিন্তু আদপে ছিল একটি রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী সরকারকে সরিয়ে মুক্তির লড়াই। কিউবাতেও তাই। ভিয়েতনামেও তাই। সুতরাং আমার সমাজবাদ আমার চিন্তা আমাকে শেখায় আমার দেশকে রক্ষা করতে। আমার দেশবাসীকে রক্ষা করতে। তাদের ভরসা দিতে -‘ভারত তেরে টুকড়ে না হোনে দেঙ্গে ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ!’ এর মাঝে কেউ নেই। না স্বামী, স্ত্রী, পরিবার, বন্ধু, পাড়া।
It’s not bad to be a ‘Proud Indian’, but it’s horrible to be a ‘Hyper Nationalist’.
( মতামত ব্যক্তিগত )
( লেখক একটি সর্বভারতীয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে কর্মরত )