কোভিডের চোখরাঙানি ভুলে পুজোর মরসুমে পর্যটকদের ঢল নামল উত্তরবঙ্গের পাহাড়, ডুয়ার্সে। পর্যটনের সরকারি এবং বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৩৫ হাজারের বেশি পর্যটক পুজোর মরসুমে ঘুরছেন দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম এবং ডুয়ার্সে। গত বছরের করোনা শুরুর পর পর্যটন শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এ বছর সেই লোকসান কিছুটা সামলে পর্যটনের ইতিহাসে গত পাঁচ বছরের পুজোয় ভিড়ের রেকর্ড গড়লেন পর্যটকেরা। তবে একই সঙ্গে ফের করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও তৈরি হল।
প্রশাসন সূত্র অনুযায়ী, ৯ই অক্টোবর থেকে সিকিম, দার্জিলিং ও ডুয়ার্সে ভিড় শুরু হয়েছে। পুজোর চার দিন তো বটেই, অন্য সময়েও গড়ে দৈনিক সাড়ে তিন হাজার পর্যটক এসেছেন উত্তরে। পর্যটন মহলের মতে, এ বারে রাজ্যের পর্যটক উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। স্থানীয়রাও রয়েছেন। এর পরেই রয়েছেন দিল্লী, গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারতের পর্যটকেরা। ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি একই রকম থাকবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় লোকজন বলছেন, আলাদা করে পরিসংখ্যানের দরকার নেই। সাধারণ চোখেই দার্জিলিং ম্যাল, কালিম্পঙের ডম্বরচক, ডুয়ার্সের লাটাগুড়ি বা জয়ন্তীতে ভিড় দেখা গিয়েছে। তেমনই, হোটেলে এক চিলতে জায়গা নেই সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে। শহুরে এবং পরিচিত এলাকায় মাস্ক, করোনা বিধি, স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও পাহাড়ি বা জঙ্গলের ভিতরের এলাকার হোম-স্টে, রিসর্টগুলিতে নিময়নীতি ততটা মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। দু’টি টিকার ডোজ বা আরটিপিসিআর পরীক্ষার শংসাপত্র ছাড়াই ঘুরছেন অনেকে। রাজ্য পর্যটন দফতরের এক সচিবের কথায়, মানুষ যে আর ঘরবন্দি থাকতে চাইছেন না, তা এ বার পুজোর ভিড় বোঝা যাচ্ছে। প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ পাহাড়ে বা ডুয়ার্সে আসছেন।
উল্লেখ্য, অনেক দিন পর পর্যটক যেমন বেড়েছে, তেমনই পর্যাপ্ত হোটেল না মেলা এবং গাড়ি ভাড়া নিয়েও অভিযোগও সামনে এসেছে। নবমীর দিন সকালে ম্যাল চৌরাস্তায় একাধিক ব্যাগ নিয়ে বসেছিলেন দুর্গাপুরের রজনী সেন। স্বামী বিশ্বজ্যোতি কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে। হুট করে ছেলেকে নিয়ে শৈলশহরে এসে পড়েছেন। হোটেল না পেয়ে কয়েক ঘন্টা ম্যালেই কাটান। তিনি বলেন, “মাথা গোঁজার জায়গা পাচ্ছি না।” আবার সিকিমের গ্যাংটক ঘুরে ফেরার সময়ে বারাসতের বিকাশ সাহা জানিয়ে গেলেন, “শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে গাড়ি দশ হাজার টাকা নিয়েছে।” এমন পরিস্থিতি যে হবে, তা পুরোপুরি আঁচ করতে পারেননি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও। পর্যটন সংগঠনের কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “অস্বাভাবিক ভিড় হয়েছে এ বার। গাড়ি কম হওয়ায় ভাড়া বেশি। হোটেলেরও কিছু সমস্যা হচ্ছে।”