বুধবার উত্তরবঙ্গে প্রচার শেষ করে কলকাতার উপকণ্ঠেও পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে প্রথম জনসভা সারলেন তৃণমূল নেত্রী। এরপর বিকেলে যাদবপুর এবং টালিগঞ্জেও সভা করলেন তিনি। আহত পা নিয়েই জেলায় জেলায় পৌঁছে যাচ্ছেন মমতা। মানুষের দরবারে প্রচারের ঝড় তুলছেন তৃণমূল নেত্রী। এদিন টালিগঞ্জেথ সভা থেকেই বিজেপির দিকে প্রবল কটাক্ষে তির ছুঁড়ে দিলেন তিনি।
গেরুয়াশিবিরকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “টালিগঞ্জের সিনেমাপাড়ার সঙ্গে যুক্ত অনেকে আছে, আছেন বুদ্ধিজীবী, শ্রমজীবীরা। আজ গুজরাটের দুই সিন্ডিকেট জগাই আর মাধাই চেষ্টা করছে বাংলাকে দখল করার। আসানসোল থেকে একটা মন্ত্রী নিয়ে এসেছে প্রার্থী করতে, শিল্পী হিসাবে ওঁকে সম্মান করি কিন্তু যা নীচু কথাবার্তা বলে ওরা। এখানে লোকাল কাউকে পেলে না?” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সুনার বাঙ্গাল বলে, সোনার বাংলা বলতে পারেনা আর ওরা বাংলাকে বদলাবে বলছে। নরেন্দ্র মোদী স্ক্রিন থেকে দেখে বাংলা বলে, ওরা বলছে বাংলা ডবল ইঞ্জিন করবে। রেলওয়ে, ব্যাঙ্ক, বিএসএনএল, এমটিএনএল সব বন্ধ করে দিচ্ছে, কোটি কোটি ছেলেমেয়েদের চাকরি চলে যাব, ব্যাংক বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের টাকা চলে যাবে। আপনাদের মনে নেই অসমে কি হলো, সিএএ, এনপিআয, এনআরসি নিয়ে এলো, দেশে দাঙ্গা হলো, অসমে ১৪ লক্ষ মানুষ ডিটেনশন ক্যাম্পে। আমি একা এনপিআর করতে দিইনি রাজ্যে। এরা একনায়কতন্ত্রের বাবা, চাউসেস্কু, হিটলার, মুসোলিনি, ট্রাম্প, সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে।”
এরপর মুখ্যমন্ত্রীর উক্তি, “এরা রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বদলে দিচ্ছে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙছে, কবে আবার বিশ্বভারতী বন্ধ করে দেবে, এরা অমর্ত্য সেনকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে। লজ্জা লাগে যখন ওরা এসে বলে সুনার বাংলা বানাবে। আমি মাছ ভাত খাওয়াবো, রসগোল্লা খাওয়াব ওদের, কিন্তু বাংলা মাকে দেব না। আমরা বাংলাকে যে জায়গায় নিয়ে গেছি, কেউ করতে পারেনি।” মমতা জানান, “ওরা আজকে বলছে তিন দফায় ওরা ৬৮-৭০ আসন পাবে, ঝাড়খন্ড, ছত্রিশগড়, মহারাষ্ট্র, দিল্লি যেখানে যত আসন পাবে বলেছিল কিছুই পাইনি, আমরা ওদের গোলগাপ্পা খাইয়ে দেবো। ম্যাচ ড্র হবে না, জানে ম্যাচে হেরে গেছে। টাকার দমের সঙ্গে হাওয়ার দম চাই। তাই মিথ্যা কথা বলছে, এতই যদি ভাল হয়, তাহলে বিহার, ঝাড়খন্ড থেকে লোক এনে মিটিং করতে হয়?” এভাবেই বিজেপিকে একহাত নেনে তিনি।
করোন পরিস্থিতি নিয়েও বিজেপিকে তোপ দাগেন মমতা। “আমি ওদের বলেছিলাম যে পারমিশন দাও, আমি পয়সা খরচা করে সবাইকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবো, অনুমতি দেয়নি। কোভিডের জন্য একটা পয়সা দেয় নি। আম্পানের জন্য একটা পয়সা দেয়নি, আমি সারারাত ধরে ১৯ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে দিয়ে বাঁচিয়েছি, ওরা কেউ আসেনি, আর আজকে হাজারটা নেতা এনে হোটেলে রেখে নির্বাচনে প্রচার করছে। ৯৫০ টাকা গ্যাসের দাম, আর আমি বিনা পয়সায় চাল দিই। হঠাৎ করে রটিয়ে দিচ্ছে ১৪৪ ধারা চলবে, নির্বাচনের আগে এমনিতেই ১৪৪ ধারা থাকে নির্বাচন কেন্দ্রে ২০০ মিটারের মধ্যে।” জানান তিনি।
এরপর নিন্দুকদের কটাক্ষ করে মমতার বার্তা, “আমাকে যারা ভ্যাঙাচ্ছে, তাদের বলি আপনাদের সুমতি হোক। রোজ ৫০ বার করে ভ্যাঙাবেন, আমার ৫০টা করে ভোট বাড়বে। খেলা হবে, এই একটা স্লোগান ওদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। খেলা তো হবেই। হাতা, খুন্তি নিয়ে খেলা হবে।” বিজেপিকে একহাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ওরা নোট বন্দি করেছে, লকডাউন করেছে, কোভিডে লোক মেরেছে, প্ল্যানিং কমিশন বন্ধ করে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বন্ধ করে দিয়েছে। ওরা মাছের তেলে মাছ ভাজছে। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমাকেই দিচ্ছে। ওরা ভেবেছিল পা ভেঙে দিয়ে আমাকে আটকে দেবে। আমার এক পায়ের সঙ্গে মা-বোনেদের দুই পা আছে, একসঙ্গে চলবো। আমাদের দল করে এক ফিল্মস্টার কে ওরা বলেছে ২৫ কোটি টাকা দেবে যদি তৃণমূলের হয়ে প্রচার না করে।”
উল্লেখ্য, জনগণের উদ্দেশে তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, “জিতলে আমরা দুয়ারে দুয়ারে বিনা পয়সায় রেশন পৌঁছে দেব, মা-বোনেদের ৫০০ থেকে হাজার টাকা দেব প্রতি মাসে হাত খরচা হিসাবে। সমস্ত বিধবাদের ভাতা দেব, কৃষকদের একর প্রতি ১০ হাজার টাকা দেবো, আর ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড করে দেবো, সরকার জামিন থাকবে। বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমে গেছে। আমি মাতৃবন্দনা প্রকল্পে মেয়েদের ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেব, স্বাস্থ্যসাথী মা-বোনেদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে, ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা করাতে পারবেন, এমনকী ভেলোরে এইমস-এও যেতে পারবেন।”
“আমি পাড়ায় পাড়ায় সমাধান করে মানুষের দুয়ারে সরকারি পরিষেবা নিয়ে এসেছি। আমি উদ্বাস্তুদের জন্য জমির দলিল করে দিচ্ছি, রাজ্য সরকারের জমিতে হয়েছে, অন্যগুলো হচ্ছে। আপনারা সবাই নাগরিক, ওই ডিটেনশন ক্যাম্পে ওদের পাঠিয়ে দেব, আমরা যাব না।” টালিগঞ্জের সভা থেকে জোর গলায় জানান মমতা। পাশাপাশি বার্তা দেন, “আপনাদের প্রার্থী হচ্ছে রোজভ্যালির একটা রোজ, সেই রোজকে ভোট দেবেন না এক্সপোজ করবেন? নির্বাচনের দিন কেন্দ্রীয় পুলিশ ভয় দেখাবে, আপনারা প্রতিরোধ করবেন, কিন্তু ভোটটা দেবেন। খাল কেটে বিজেপির কুমিরকে আনবেন না, বিজেপির র্যালিতে ওরা মহিলা সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসভ্যতা করেছে।”