নিজের চলচ্চিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরিচালক শ্রী তপন সিনহার ‘কিছু ছায়া কিছু ছবি’ নামক গ্রন্থে, বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীর বায়নাক্কা সামলানোর বা কাজে ফাঁকি দেবার বেশ কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার খোঁজ পাওয়া যায়। সেখানে ঠিক এক উল্টো কাণ্ডের কথা তিনি লিখে গিয়েছেন অশোককুমারের বেলায়। ১৯৬৬ সালের কথা। তখন তপন সিনহার পরিচালনায় ‘হাটেবাজারে’ চলচ্চিত্রের শ্যুটিং চলছিল ভুটানে। পাহাড়ঘেরা একটা ছোট্ট বস্তি – নাম ছিল ‘শাম্চি’। সেখানেই কাজ হবে বলে ঠিক হয়েছিল। এ দিকে হঠাৎই কঠিন হাঁপানিতে ধরেছিল অশোককুমারকে। দু’দিন দু’রাত তাঁর শোওয়া ছিল না, চোখে ঘুম ছিল না। হোটেলের বিছানায় বসে বসে একটানা নিঃশ্বাস ফেলতেন অশোককুমার। কষ্টটা চোখ চেয়ে দেখা দেখা যেত না – এতটাই করুণ অবস্থা হয়েছিল তাঁর। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ‘প্রফুল্ল সেন’। তাঁর কাছে খবর গিয়েছিল। তিনি তড়িঘড়ি ডাক্তার ‘মণি ছেত্রী’কে পাঠিয়েছিলেন সরকারের নিজস্ব প্লেনে, অশোককুমারের চিকিৎসা করার জন্য। তাঁর ওষুধেই হাঁপানি কমেছিল অশোককুমারের। কিন্তু তাঁর শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বাধ্য হয়ে তাঁকে বিশ্রাম নিতে বলে অন্যদের নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তপন সিনহা। অশোককুমারের হাঁপানির টান কমে যাবার পরের দিন ভোরবেলায় যখন সবাই কাজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ দেখা গিয়েছিল তৈরি হয়ে বসে আছেন অশোককুমারও। তপন সিনহা তাঁকে দেখেই আঁতকে উঠে বলেছিলেন, ‘‘আরে, এ কী! আপনার তো বিশ্রাম নেওয়ার কথা!’’ উত্তরে অশোককুমার তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘সবাই কাজ করবে, আর আমি হাঁ করে বসে থাকব? হয় কাজ করতে দাও, নইলে বম্বে ফেরত পাঠাও।’’ নাছোড় অশোককুমার কারও কোনও কথাই শুনতে রাজি হননি। ফলে কাজ করতে দিতেই হয়েছিল তাঁকে। ধীরে ধীরে সেরেও উঠেছিলেন তিনি। অশোককুমার মানুষটি ছিলেন এমনই!
আজ তাঁর জন্মদিন। কিন্তু নিজের ভাইয়ের মৃত্যুদিনে চাপা পড়ে গেছে সেই দিন। অনুজের মৃত্যুর পরে অগ্রজ তাঁর জীবদ্দশায় কোনও দিন আর নিজের জন্মদিন পালন করেন নি। অথচ ‘গাঙ্গুলি ব্রাদার্স’ এর তিনিই ছিলেন বাকিদের অগ্রজ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ছিলেন সকলের প্রিয় ‘দাদামনি’।
আশির দশকের কথা। একদিন রাজ কপূর ও শাম্মি কপূর বম্বে এয়ারপোর্টে এসেছিলেন বিমান ধরতে। দুই ভাইকে দেখে জনতা উদ্বেল। কান ফাটানো চিৎকার। রাজ যেন একটু বেশিই চুপ ছিলেন। শাম্মিও লক্ষ করেছিলেন। প্লেন উড়তে শুরু করতেই প্রশ্নটা করেছিলেন তিনি – ‘‘কিসি বাত সে পড়েশান হো আপ?’’ রাজ তাঁকে ধীরে ধীরে বলেছিলেন, ‘‘কত কিছু শেখালাম তোমাকে। সোনার মতো কেরিয়ার পেলে তুমি! ‘তুমসা নহি দেখা’, ‘জংলি’, ‘কাশ্মীর কী কলি’, ‘ব্রহ্মচারী’ … আর আজ দেখি লোকে তোমাকে দেখে ‘ইয়াহু’র বদলে ‘পান…’, ‘পান…’ বলে ডাকছে! ওই পান মশলার বিজ্ঞাপনটা কি না করলেই চলছিল না তোমার?’’ শাম্মি টকটকে লাল মুখ করে উত্তর করেছিলেন, ‘‘একবার দাদামণির সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে চেয়েছিলাম আমি। কবে থেকে ইচ্ছে আমার! কিন্তু কেউ কোনও দিন একটা ছবিতেও আমাকে ওঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিল না। তার পর এই অ্যাডের অফারটা এল। কীসের বিজ্ঞাপন, কত দক্ষিণা কিচ্ছু না জেনে, শুধু দাদামণির সঙ্গে একটু অভিনয় করতে পারব শুনেই হ্যাঁ করে দিয়েছি।’’ উত্তর শুনে রাজ আরও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক এমনই হতভম্ব তিনি নিজেই হয়েছিলেন চল্লিশ বছর আগে। সে দিন ছিল তাঁর বিয়ে। ঘোমটা ঢাকা সলাজ নববধূকে সঙ্গে নিয়ে স্টেজে দাঁড়িয়ে ইন্ডাস্ট্রির গণ্যমান্যদের আশীর্বাদ নিচ্ছিলেন। তার পরে পৃথ্বীরাজ কপূরের বড় ছেলের বিয়েতে ঢুকেছিলেন বম্বে টকিজ়ের এক নম্বর স্টার অশোককুমার। তাঁকে দেখামাত্র নতুন বউ কৃষ্ণা রাজ কপূর ঘোমটা সরিয়ে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন, ‘‘আরে, অশোককুমার!’’ তার পরে রাজ্যের অপরিচিত অভ্যাগত, রাজনীতির সব কেষ্টবিষ্টুদের দিকে তাকিয়ে ভারী উত্তেজিত ভাবে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘আমি ‘কিসমত’ তিন বার দেখেছি। আর ‘অচ্ছুৎ কন্যা’ আমার দেখা প্রথম ফিল্ম।’’ অশোককুমার তখন হোহো করে হাসছিলেন। পৃথ্বীরাজ কপূর তখন কী ভাবে বরকর্তাসুলভ গাম্ভীর্য ধরে রাখবেন, সেটা ভেবে পাচ্ছিলেন না। তরুণ রাজ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দেখেছিলেন, শান্ত বলে পরিচিত তাঁর ছোট ভাই শশী কেমন টেবিলে প্লেট, কাঁটা চামচ নিয়ে বসা হাই প্রোফাইল অতিথিদের হার্ডল জ্ঞানে টপকাতে টপকাতে ছুটে এসে কচি গলায় রিনরিন করছিলেন – ‘দাদামণি ম্যায় ইধার।’ তিনি যে ফিল্মে অশোককুমারের ছোটবেলার পার্ট করতেন! তাই দু’জনের খুব দোস্তি ছিল। এই অদ্ভুত কাণ্ডের সাক্ষী রয়ে গিয়েছিল রাজের বিয়ের অ্যালবাম। তাতে তাঁর বাবা গম্ভীর, ভাইয়েরা স্টেজের উপরে কুস্তি করছিলেন, নতুন বউ কান এঁটো করে হাসছিলেন, রাজের বেচারা মুখ আর মধ্যমণি দাদামণি। রাজ কপূরের রিসেপশন প্রায় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে ছবি থেকে কৌতুকে চোখ পাকিয়েছিলেন রঘু ডাকাতের বংশধর।
পুরো বাঙালি সমাজে যে ক’টি এলেমদার রাজবংশ আছে, যেখানে বিধাতাপুরুষ সকাল-বিকেল রূপ, জ্ঞান, বহুমুখী প্রতিভার হরির লুট ছোড়েন, সেই ভাগ্যবানদের অন্যতম হল ভাগলপুরের গঙ্গোপাধ্যায়রা! অশোককুমার মা-বাবা দু’দিক দিয়ে নীল রক্তের অধিকারী। তিনি সত্যি সত্যিই খোদ রঘু ডাকাতের নাতির নাতি। রবিনহুড ধাঁচে জমিদারি সামলানোর পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় আইন পড়েছিলেন তাঁরা। তাঁর মায়ের দিকের দাদু ছিলেন শিবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সহপাঠী, দু’জনে একসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। বঙ্কিম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরিটা নিয়েছিলেন, তবে শিবচন্দ্রের রকমসকম অন্য ছিল কিনা, তাই তিনি সে দিকে যাননি। লোকাল বারে প্র্যাকটিস করে কোটিপতি হয়েছিলেন। সেই টাকায় ভাগলপুরে ঘাট বসিয়ে, মন্দির গড়ে, স্কুল বানিয়ে মানুষের লোকের মনমুকুরে প্রায় আকবর বাদশা হয়ে উঠেছিলেন। বাদ সেধেছিল ইংরেজ। তারা তাঁকে রাজবাড়ি গড়ে দিয়ে, ‘রাজবাহাদুর’ খেতাব দিয়েছিল এক শর্তে – আইন প্র্যাকটিস করা যাবে না। শিবচন্দ্র সে কথা মানতে রটে গিয়েছিল বঙ্গ জুড়ে, মাথায় তাঁর দোষ আছে। লোকে তাঁকে নিয়ে গান বেঁধেছিল, ‘অংরেজি বাজা/ রাজ না পাট/শিবচন্দ্র রাজা।’
যতই লোকে ‘পাগলা রাজা’ বলুক, শিবচন্দ্রের কিন্তু মেজাজ ছিল দরিয়া। বাড়িতে নাটক গান সংস্কৃতি চর্চার আবহ ছিল বেশ। ছোটবেলায় এই মামাবাড়িতেই থাকতেন অশোক। তখন তাঁর নাম ছিল ‘কুমুদ’। সে বাড়িতে তখন নিত্য আনাগোনা করতেন ঔপন্যাসিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, বনফুল, হেমেন রায়রা। শিবচন্দ্র তাঁদের সঙ্গে কুমুদের আলাপ করিয়ে বলতেন, ‘‘আচ্ছা, খোকা ওই গল্পটা বলো তো দেখি, যেখানে তোমার কাঁধে ডানা গজাল।’’ খোকা বলতে শুরু করলে কেউ ফুট কেটেছিলেন, ‘‘তা, ডানা গজিয়ে দেখাও তো।’’ খোকা চটাং করে জবাব দিয়েছিল, ‘‘তুমি বাঘ হয়ে দেখাও তো, তবেই আমি ডানা বার করব।’’ রাজা শিবচন্দ্র তাঁর পিঠ চাপড়ে দিয়ে এক শ্যামবর্ণ তরুণের সামনে দাঁড় করিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তুমি কী লিখবে হে, আমার এই প্রপৌত্রটি তোমার চাইতেও সরেস গল্প বলে। শুনিয়ে দাও তো খোকা।’’ সে তরুণ ছিলেন উপেন্দ্রনাথের ভাগ্নে, তিনি তখন সবে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। খোকা ফিচেল হেসে বলেছিল, ‘‘তুমি কখনও রুপোর ভাত খেয়েছ? তার সঙ্গে রুপোর পটোল ভাজা?’’ খোকার গল্প আরও এগোত, কিন্তু সে সময়েই অন্দরমহল থেকে এসে তাঁর কান পাকড়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর মা গৌরীরানি। কারণ, এ বার শাস্ত্রগানের তালিম নেবে সে মায়ের কাছে। সে দিকেও তাঁর খুব মন ছিল। সঙ্গে শুধু হাত খুলে তবলা বাজাতে দিতে হত বাবার টাকে! নইলে ছন্দটা ধরতে তাঁর সমস্যা হত।
বহু বছর বাদে সেই যুবকের সঙ্গে খোকার আবার দেখা হয়েছিল নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োয়। সেদিন বীরেন্দ্র সরকারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নায়ক অশোককুমার। অফিসঘরে গিয়ে দেখেছিলেন, শ্যামবর্ণ সৌম্যদর্শন এক প্রৌঢ় বসে। সেদিন সামনে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখে নায়ক অশোককুমার একটু জড়সড় হয়ে পড়েছিলেন। কথাসাহিত্যিক তাঁকে দেখেই উদাস ভাবে বলেছিলেন, ‘‘রুপোর ভাত আর রুপোর পটোল আজও পেলাম না। জানো তো!’’ শুনে অশোককুমার পালাতে পথ পান না। শরৎচন্দ্র তখন স্নেহের স্বরে তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তোমার ফিল্মের স্টোরি ডেভেলপিংয়ের সময় তুমি থেকো কিন্তু। তাতে সকলের উপকার হবে।’’ তাঁর পরামর্শ সে দিন অভিনেতা অশোককুমার শুনেছিলেন বলেই আজও ইন্ডাস্ট্রির এত রমরমা। কী ভাবে? সে প্রসঙ্গ পরে। তবে আরও এক ডাকসাইটে বাঙালি লেখক স্বয়ং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু সে সব কথার আগে বম্বে টকিজ আর হিমাংশু রায় – নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন।
কুমুদলালের পরের বোন সতীর বিয়ে ঠিক হওয়ার সময়ে ভগ্নীপতি শশধর মুখোপাধ্যায় বিশেষ কিছু করতেন না। তার পরেই মেঘনাদ সাহার এই গুণী ছাত্রটি হিমাংশু রায়ের বম্বে টকিজে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি পেয়েছিলেন। এতে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন সতীর ‘দাদামণি’ কুমুদ। তিনি তখন কলকাতায় আইন পড়তেন আর নাটক-সিনেমার খুব ভক্ত হয়েছিলেন। দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দানিবাবুদের খুঁটিয়ে দেখতেন। তবে শিশির ভাদুড়ী আর তারাসুন্দরীকে মঞ্চে ঘনিষ্ঠ হতে দেখলে তাঁর কান গরম হয়ে যেত। বরং বায়োস্কোপের তাঁবুতে এডি পোলো, উইলিয়াম ম্যাকেস্টির অ্যাকশন দেখতে মজা পেতেন। ‘লাইট অফ এশিয়া’, ‘থ্রো অব ডাইস’ দেখে কুমুদ ভেবেছিলেন, এই হিমাংশু রায় তো দেখি হলিউডের মতো ছবি তোলেন! শশধর তাঁর সংস্থায় চাকরি পেয়েছেন শুনে তিনি ছটফট করে উঠে বলেছিলেন, ‘‘আচ্ছা, ও রকম কাজ শিখতে পারলে হয় না?’’ নিজে পরে বলেছিলেন, ‘‘হতচ্ছাড়া আইনের ক্লাসের থেকে ওটায় বেশি ইন্টারেস্ট হতে লাগল। ল-এর সেকেন্ড ইয়ারের এগজ়ামের ফি-র টাকায় বম্বের ট্রেনের টিকিট কিনে সোজা শশধরের বাড়িতে। সে বম্বে টকিজে আমার জন্য ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের চাকরিও দেখে রেখেছিল।’’
কুমুদকে দেখামাত্র হিমাংশু রায় অভিনেতা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসেছিলেন বম্বে টকিজ়ের জার্মান ডিরেক্টর ফ্রান্জ অস্টেন। কারণ, তাঁর চিবুকে এতটুকু কাটা কাটা ভাব ছিল না। ফলে তাঁকে জঘন্য দেখাবে ক্যামেরায়। সাফ কথা ছিল তাঁর। এসব শুনে কুমুদও চটে লাল হয়েছিলেন – কে চেয়েছে অভিনয় করতে! সামল দিয়েছিলেন হিমাংশু। কুমুদকে তিনি বুঝিয়েছিলেন, তুমি ডিরেক্টর হতে চাও তো? তবে সব শিখতে হবে। চিত্রনাট্য লেখা, ফিল্ম ল্যাবের কাজ, মেকআপ, অ্যাক্টিংও।
তখন বম্বে টকিজের জন্য হিরো হতেন নাজমুল হাসান আর হিরোইন হতেন হিমাংশুর তরুণী ভার্যা দেবিকা রানি। ‘জীবন নইয়া’র শুটিং শুরু হতেই হিমাংশু রায়ের জীবনের নৌকা ডুবিয়ে তাঁর স্ত্রী নাজমুলের হাত ধরে কলকাতা পালিয়ে গিয়েছিলেন। বহু কষ্টেসৃষ্টে তাঁকে ফেরত আনা হয়েছিল। তবে এর পর তো আর নাজমুলকে বম্বে টকিজ়ে ঢুকতে দেওয়া যায় না। কুমুদকেই ‘সেফ’ মনে হয়েছিল হিমাংশুর। সারল্য ভরা ছেলেমানুষ মুখ, চেহারায় আলগা শ্রী। আর অ্যাডোনিসের মতো হিরোয় তাঁর দরকার নেই। শশধরের শালাবাবুতেই চলবে!
সে দিনের কথা উঠলেই পরে হাঁ হাঁ করে উঠতেন অশোককুমার। বলতেন, ‘‘আরে না না, হিরোটা দেবিকা রানিকে নিয়ে পালায়নি। তাঁর শক্ত অসুখ হয়েছিল।’’ বলে মুখটা কুঁচকে রাখতেন, অথচ তাঁর সারা শরীর চাপা হাসিতে কাঁপত। তিনি বলতেন, ‘‘আমাকে হিমাংশু রায় হিরো করে দিল, পটলবাবুর মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়েটা ভেঙে গেল। বাড়িতে সবাই বলল আমি বখে গেছি, আমাকে এ বার পরিতে ধরে নিয়ে যাবে। বাবা বম্বে ছুটে এলেন। শশধর তাঁকে বোঝাতে না পেরে হিমাংশু রায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিলেন।’’ কুমুদের বাবা দুটো মুখবন্ধ খাম নিয়ে রায়সাহেবের ঘরে ঢুকেছিলেন। তাঁর মধ্যে একটায় ছিল তাঁর হস্টেলের বন্ধু, পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের চিঠি। মিটিং শেষে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে কুমুদকে বলেছিলেন, ‘‘মন দিয়ে অভিনয় করো। তবে তাঁর অনুরোধেই আমার নাম বদলে অশোককুমার করে দেওয়া হয়েছিল।’’
সেই ‘জীবন নইয়া’তে অশোক যা অভিনয় করেছিলেন, সেটা ভোলার নয়। পরে সে প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি হাত দিয়ে নাক চাপতেন, আর বলতেন, ‘‘পচা, পাঁকে ঠাসা নর্দমা, আবর্জনা। শুটিংয়ের সময় কত বার বললাম এ আমি পারব না। তা, এক দিন আবার আমাকে দেবিকা রানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। একে তিনি আমার বসের স্ত্রী, তার ওপর ওপাশে সোফায় আমার মা বসে আছেন। আমি ঘেমেনেয়ে একশা। হিরোইনকে একটা হার পরানোর কথা ছিল। সেটা আমি তাঁর চুলে গেঁথে বসলাম। সেটা ছাড়াতে গিয়ে দেবিকা রানির বেশ কয়েক গাছি চুল উঠেই গেল। আমি নিশ্চিন্ত হলাম, আর পরদিন থেকে যেতে হবে না। কিন্তু ছাড়ল না। তার পর, এক বার আমাকে বলা হল পাঁচিল থেকে লাফিয়ে অ্যাকশন করতে হবে। খুব উৎসাহ নিয়ে লাফ দিলাম। পড়লাম ভিলেনের পিঠে। সে পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি হল। শুটিংও বন্ধ রইল কিছু দিন। এ সবের পরও পরের ছবি ‘অচ্ছুৎ কন্যা’য় আমাকে অভিনয় করানো হল। আমি তো আশাই করিনি। কিন্তু বলা হল, প্রথম সিনেমায় আমার চুল সকলের খুব পছন্দ হয়েছে।’’
‘অচ্ছুৎ কন্যা’র শুটিং শুরুর আগে হিমাংশু রায় অশোককুমারকে বিদেশি সিনেমা দেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ফিল্মের খুঁটিনাটি জানতে প্রচুর বইও পড়তে দিয়েছিলেন। সে সব দেখেশুনে অশোক বুঝেছিলেন, তিনি অভিনেতা হিসেবে বড় ম্রিয়মাণ, বড় আড়ষ্ট। তিনি বাচিক ও আঙ্গিক দু’রকম প্রকাশভঙ্গিকে আরও তীক্ষ্ণ করার চেষ্টা শুরু করেছিলেন। তাঁর মনে হতে শুরু হয়েছিল, এই মাধ্যমটিকে ভালবেসে ফেলছেন তিনি। এর সঙ্গেই পর্দায় তাঁর অভিনয়ে নানা বৈচিত্র দেখা দিতে শুরু হয়েছিল। ‘বচন’-এ রাজপুত শৌর্য, ‘ইজ্জত’-এ দেশি রোমিওর ভূমিকায় তাঁর চরিত্রায়ণ সকলের নজর কেড়েছিল। এরই মাঝে সেই সময়ে ব্যক্তিগত জীবনের সংঘাতে চূড়ান্ত শ্রান্ত হিমাংশু তাঁকে একটি মহামন্ত্র দিয়েছিলেন, ‘‘এ মায়ানগরী, ইয়ং ম্যান। নতুন বিয়ে করেছ, নাম করছ। কিন্তু কখনও প্রলোভনে পড়বে না। ছ’টার মধ্যে প্রতি দিন কাজ শেষ করে বাড়ি চলে যাবে। নয়তো সৃষ্টির গরল তোমার জীবনেও প্রবেশ করবে। তা হতে দেবে না। কথা দাও।’’ উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে হ্যান্ড শেক করেছিলেন অশোককুমার।
হিমাংশু তাঁকে কমিক আর ভিলেন, দু’রকম চরিত্র করতেও কড়া নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু অশোক ছিলেন বিচিত্রবর্ণের মানুষ, তাঁর সব রকমটাই করতে সাধ হত। হিমাংশুর মৃত্যুর পরে বম্বে টকিজের যখন ঘোর দুর্দিন দেখা দিয়েছিল, তখন শশধর, তাঁর বন্ধু জ্ঞান মুখোপাধ্যায় আর অশোককুমার একসঙ্গে বসেছিলেন। তাঁরা ভেবেচিন্তে ঠিক করেছিলেন, একঘেয়ে প্রেমের পানসে গল্প দিয়ে আর সিনেমা বানানো ঠিক হবে না। ঠিক হয়েছিল, চার দিকে যুদ্ধ, দুঃসময়, নৈরাজ্য, দুর্বোধ্য চরিত্রের মানুষকে নিয়েই চিত্রনাট্য লিখতে হবে। পশ্চিমেও তখন এমনটাই হচ্ছিল। কয়েকটা বিদেশি ছবির অনুপ্রেরণায় একটা নতুন থিম ভেবেছিলেন তাঁরা। সেই থিমেই তৈরি হয়েছিল ‘কিসমত’। সেই ছবির মুখ্য চরিত্র আড়চোখে লোককে দেখত, ঠকাত, দাঁতে সিগার চেপে ধোঁয়া ছাড়ত। দাদামণি দেখেছিলেন, খলচরিত্রে অভিনয়টা তাঁর কিন্তু দিব্যি আসে। ১৯৪৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছকভাঙা ছবিটি দীর্ঘদিন ভারতের সফলতম ছবি ছিল। পরে সে রেকর্ড ভেঙেছিল ‘শোলে’। ক্রিপ করা ব্যাকব্রাশ চুল, আংরেজ পাতলুন, আঙুলের ফাঁকে সিগারেটে ছেলেদের তখন দাদামণি সাজার কী ধুম! এই লেডিকিলার লুক আর ক্যারেক্টারে পরেও অশোককুমারকে পর্দায় দেখা গিয়েছিল। ‘হাওড়া ব্রিজ’, ‘ভাই ভাই’ … পুরোদস্তুর ভিলেন হয়ে তিনি মাত করেছিলেন ‘জুয়েল থিফ’-এ।
পরে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তবস্সুমকে বলেছিলেন, ‘‘তা বলে মানুষটা আমি ভিলেন ছিলাম না, কী বলো। আমাদের সময়ে কেউ কারুর সঙ্গেই ভিলেনি করত না তেমন। কত ছবি হত, কত কাজ। শুধু দেবিকা রানির সঙ্গে আমার একটু তেতো সম্পর্ক হযে গিয়েছিল। তিনি আমার বদলে দিলীপকে কাজ দিতেন। তাতে আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টসকায়নি। আমিও তো নতুন হিরো খুঁজতাম। একদিন একটা বেশ সুন্দর দেখতে ছেলে এসে আমার কাছে কাজ চাইল। আমি তাকে ‘জিদ্দি’র নায়কের চরিত্রটায় নামানোর ব্যবস্থা করলাম। সে ছেলে কোত্থেকে যেন ‘দেবানন্দ’ হয়ে গেল। ওর একটাই দোষ ছিল। একটু বেশি ঘাড় নাড়াত। এখন তো আরও বেশি নাড়ায়। আমিও প্রথম দিকে অমন করতাম। আমাকে দেবিকা রানি শুধরে দিয়েছিলেন।’’ তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এক দিন একটা লম্বা মতো ছেলে সেটে বসে কী সব নোট নিচ্ছিল দেখে তিনি তাঁকে বার করে দিতে গিয়েছিলেন। পরে দেখা গিয়েছিল, সে ‘পথের পাঁচালি’ বানিয়ে ফেলেছে। যদি সেদিন তিনি জানতেন সে-ই সত্যজিৎ রায়, তবে আরও আদরযত্ন করলে নিজেরই উপকার হত বলে কপট দুঃখ করতেন। উত্তমকুমারকে ‘আনন্দ আশ্রম’ করার সময়ে বলেছিলেন, ‘‘অ্যাই এই ডাবল ভার্সন ব্যাপারটা আমাকে ভাল করে শিখিয়ে দেবে।’’ উত্তম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘… ‘হাটেবাজারে’, ‘মমতা’ এসব আমার করা সিনেমা তো, তাই আমি আপনাকে শেখাব!’’ তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওই জন্য ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’তে তুমি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেলে, আর আমার ‘হাটেবাজারে’ ফক্কা পেল!’’ এমন বলেছিলেন বটে, কিন্তু ভাষায় পালিশ দিতে তিনি আটটা ভাষা শিখেছিলেন! হিন্দি, উর্দু, ইংরেজিতে চোস্ত ছিলেন। তাই কত সময়ে নিজের ডায়লগ সেটে গিয়ে নিজেই বানিয়ে বলে দিতেন। ও ভাবেই তাঁর আর প্রাণের অপূর্ব রসায়ন, কমিক টাইমিংয়ের গুণে ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’ বাম্পার হিট হয়েছিল! সেই সিনেমায় বুঝি প্রথম বার দাদামণির শরীর মোচড়ানো অভিনয় লক্ষ করেছিলেন সবাই। সেই সিনেমায় ছিঁচকে চোর প্রাণ আর অশোক জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময়ে জেলারের কাছে ভালমানুষের মতো বাড়ি ফেরার টাকা চেয়েছিলেন। কত টাকা? প্রাণ বলেছিলেন, ‘তুই বল।’ অশোক ঝুঁকে বাও করে বলেছিলেন, ‘স্যর আমি সিঙ্গাপুরে থাকি, দয়া করে পাঁচ হাজার টাকা দেবেন গাড়িভাড়া বাবদ।’ প্রাণ দেখাদেখি সেলাম ঠুকে বলেছিলেন, ‘আর আমি হংকংয়ে থাকি। আমাকে চার হাজার দিলেই হবে।’ এই পুরো সিনটা দু’জনে মিলে সেটে দাঁড়িয়ে ইম্প্রোভাইজ করেছিলেন!
অশোককুমার চরিত্রাভিনয়ের দিকে সরে আসার পরে আরও ভাল করে তাঁকে ব্যবহার করা গিয়েছিল বলে মনে করতেন তাঁর পরিবারবন্ধু ও এক সময়ের শিশু অভিনেত্রী তবস্সুম। তিনি বলেছিলেন, ‘‘উনি নিজের সিনগুলো বাড়িতে প্র্যাকটিস করতেন কী ভাবে, জানো তো? ‘গুমরাহ’-এ তিনি এক জন কর্তব্যপরায়ণ স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করবেন। ক’দিন রান্নাঘরে, বাগানে শোভা বৌদির পিছন পিছন ঘুরলেন। ‘শোভা, শিগগির চা আনো’, ‘কাগজটা কোথায় রাখলে’ … সে কী হাঁকডাক। এ বার ‘গুমরাহ’র প্রিমিয়ারে গিয়ে শোভা বৌদি রেগে কাঁই – বাড়িতে যা যা হয়, সব পর্দায় দেখতে পাচ্ছেন। দাদামণি গাল ফোলালেন, তার পরে এক হাত লম্বা জিভ কাটালেন।’’ ‘খুবসুরত’-এ যেখানে তিনি রেখার সঙ্গে রাকেশ রোশনের বিয়ের কথা পাড়ছেন দিনা পাঠকের কাছে, আর ব্যক্তিত্বময়ী স্ত্রী তা নাকচ করে দিচ্ছেন, তখন সেই লাখ টাকার মুখভঙ্গিটি পর্দাতেও দেখিয়েছিলেন তিনি। জানা যায় ‘খুবসুরত’-এ অশোকের পুরো চরিত্রটাই তাঁর নিজের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। এর অনেক আগে ‘চলতি কা নাম গাড়ি’তে তাঁরা তিন ভাই নিজেদের ভূমিকাতেই অভিনয় করেছিলেন। ডাকাবুকো দাদামণির কাছ থেকে সত্যিই লুকিয়ে থাকতেন কিশোরকুমার। রুমা গুহঠাকুরতাকে বিয়ে করে কিশোর বলতে গিয়েছিলেন, তাঁরা অন্য বাড়িতে থাকবেন। দাদমণি শুনে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘‘কেন?’’ অমনি কিশোর বলেছিলেন, ‘‘আমি তো রেজিস্ট্রি করেছি, বিয়ে করিনি।’’ শুনে, ‘‘কে সাক্ষী দিয়েছে?’’ – জানতে চেয়েছিলেন অশোককুমার; কিশোর ঢোঁক গিলে উত্তর দিয়েছিলেন – ‘‘মেহমুদ।’’ কিশোর সব বলে ফেলেছে জেনে মেহমুদ গাছের ডালে উঠে বসে ছিলেন! কে জানি তাঁকে বলেছিল, দাদামণি পিস্তল হাতে তাঁকে খুঁজছেন। হতেই পারে! বক্সিং জানা লোক।
প্রতিভার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন ‘ছোটি সি বাত’-এর ‘কর্নেল জুলিয়াস নগেন্দ্রনাথ উইলফ্রেড সিংহ’। দাবা খেলতে জানতেন, বক্সিং-ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, ননসেন্স রাইম রচয়িতা ছিলেন, ভিন্টেজ গাড়ির শখ ছিল, দুর্দান্ত পেন্টার ছিলেন; এগুলোর সাথে ছিলেন কথা ফলিয়ে দেওয়া জ্যোতিষী এবং ভারতের অন্যতম সফল হোমিয়োপ্যাথিক চিকিৎসক। রোজ সকাল সাতটা থেকে ন’টা বাড়িতে চেম্বার করতেন। সেখানে রোগীদের লম্বা লাইন পড়ত।
তাঁর হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসার ঘটনা জানা যায় অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে। ‘‘আমার শাশুড়ি মায়ের হাঁপের টান ছিল। সেটা আমার মেয়ে পায়েলেরও শিশু বয়সেই দেখা দিল। দাদামণির ধন্বন্তরী ওষুধে সেরে গেল’’ – এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে ‘অনুরাগ’-এ প্রথম কাজ করি। আমার প্রথম হিন্দি সিনেমা। অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলেন আমায়। কান্না আসার আগে গলা কী ভাবে ভাঙতে হয়, উনি আর নূতনজি মিলে আমাকে শেখান। খেতে ও খাওয়াতে খুব ভালবাসতেন। ব্রেক হলেই বলতেন, ‘চারটে করে শিঙাড়া আন সবার জন্য।’ আমাকে বলতেন, ‘তোর জিভে কালো দাগ আছে। কাউকে জিভ ভেঙাবি না, কটু কথা বলবি না। সব ফলে যাবে।’ … ওঁরা, মানে মদন পুরি, ইফতিকার, দাদামণিরা নিজেদের মতো ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতেন। কিন্তু আমাদের মতো ছোটদের সামনে একটাও খারাপ কথাও বলেননি। একটা দামি কথা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে শিখতে চাস? শোন তুই যদি আমার কাছে শিখিস, আমিও তোর কাছে কিছু শিখব।’ …’’
শিল্পের জন্য কী করেননি তিনি! প্রথমে তাঁর কণ্ঠে গাওয়া ‘বন কি চিড়িয়া’, ‘খেত কি মুলি’ শুনে সবাই বলেছিল, মেয়েলি আওয়াজ। সেই থেকে বরফ গিলে গিলে গলা খসখসে করেছিলেন তিনি! এরপরে তবলা টেনে বসে চৌখস ভঙ্গিতে গেয়েছিলেন, ‘বনবাউরি, ম্যায় হারি, যা যা রি।’ তা থেকেই তাঁর হাঁপানির টানের শুরু হয়েছিল, যা একদিন তাঁর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
অশোককুমারের থেকে বলিউড আজও শিখেই চলেছে। শিখেছে হিরোদের নামকরণ। ‘দিলীপকুমার’, ‘রাজেন্দ্রকুমার’ হয়ে ‘অক্ষয়কুমার’ অবধি। কিশোরকুমার তাঁর কাছে শিখেছিলেন ‘এক চতুর নার’ গানটি। আর তাঁর ম্যানারিজমকে পুঁজি করে আজও সংসার চালাচ্ছেন কত হাজার মিমিক্রি শিল্পী। তাঁর ভাবা গল্পেরই সুতো ধরে আজও নতুন নতুন হিট সিনেমার ফর্মুলা তৈরি হয়ে চলেছে বলিউডে। ‘মহল’ থেকে ‘করণ অর্জুন’, ‘পাকিজা’ থেকে ‘উমরাও জান’, ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’ থেকে ‘আন্দাজ় অপনা অপনা’, আবার ‘বন্দিশ’ থেকে ‘হম আপকে হ্যায় কউন’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ … সব হিট ছবির মূল আইডিয়া কিন্তু খোদ দাদামণির। দাদামণিই এই সব কাহিনির সূত্রধর। তাঁর ধরিয়ে দেওয়া গল্পের ব্যাটন হাতেই নতুন নতুন পথে ছুটে চলেছে বলিউড। আর সেসব দেখে আজও তালি বাজিয়েই চলেছি আমরা, ‘হমলোগ’।
(তথ্যসূত্র:
১- ‘অশোককুমার: হিজ় লাইফ অ্যান্ড টাইমস’: নবেন্দু ঘোষ।
২- চলচ্চিত্র প্রবেশিকা, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
৩- কিছু ছায়া কিছু ছবি, তপন সিনহা।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত