ক্লাস টেনে ওঠার সময় তুখোড় রেজাল্ট করেছিল সে। তখনই নজর কেড়েছিল স্কুলের মাস্টারমশাইদের। এমনকি ক্লাস টেনের টেস্টের ফলাফলেও তাক লেগে গিয়েছিল গোটা স্কুল, এমনকি পরিবারেও। আর তখন থেকেই ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করছিলেন মা চন্দনা পাল ও বাবা গণেশচন্দ্র পাল। কিন্তু তাই বলে গোটা রাজ্যের মধ্যে ফার্স্ট! খবরটা শুনে প্রথমে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না দুজন। ততক্ষণে গোটা তল্লাট জেনে গেছে মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির ইউনিট ১ এর ছাত্র অরিত্র পালের এই কৃতিত্বের কথা।
৬৯৪ নম্বর পেয়ে এ বছর মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ছাত্র অরিত্র। অরিত্রর বাবা সেনাবাহিনীর কর্মী। বরাবরই পরিবারের থেকে দূরে থাকেন তিনি। তাই ছোট থেকেই অরিত্রর দেখাশোনার ভার মোটের উপর মা চন্দনার উপরেই। নুদিপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা চন্দনা। স্কুলের দায়িত্বটুকু সেরে বাকি সময়টা ছেলের জন্যই বরাদ্দ থাকে তাঁর। তাই ছেলের সাফল্যে দারুন খুশি তিনিও। অরিত্রর বাবা গণেশবাবুর পোস্টিং এখন পানাগড়ে। দুজনেই বললেন, ‘‘পড়ার কথা ওকে কখনও বলতে হত না। জানতাম ভাল রেজাল্টই করবে। কিন্তু তাই বলে কখনই আশা করিনি ও মেধা তালিকায় জায়গা করে নেবে।’’
এদিকে, অরিত্র পড়াশোনায় ভালো হলেও সারাদিন পড়ার বই নিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার পক্ষে কখনই নয় সে। তার কথায়, ‘‘ফাইনাল পরীক্ষার আগেও দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়তাম। ছবি আঁকতে খুব ভালবাসি। পরীক্ষার আগেও অনেক ছবি এঁকেছি। মা-বাবা তার জন্য বকা দেয়নি কখনও।’’ অরিত্রর মা চন্দনাও বলেন, ‘‘রং-তুলি নিয়ে বসে থাকাটা ওর প্যাশন। তাই সারাদিনের পড়ার চাপ যদি ক্যানভাসের মাধ্যমে কিছুটা হাল্কা হয়, তাতে মন্দ কী!’’
অঙ্ক, বিজ্ঞান ও ইংরেজির টিউটর ছিল অরিত্রর। বাকি বিষয়গুলিতে সাহায্য করতেন মা চন্দনাদেবী নিজেই। দিনে স্কুল, সন্ধ্যায় টিউশন সেরে নিজের পড়াশোনাটা রাতেই করত অরিত্র। এদিন তার সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অরিত্র বাড়িতে এসে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যান মেমারি পুরসভার প্রশাসক স্বপন বিষয়ী ও মেমারি থানার ওসি সুদীপ্ত মুখার্জি। আর অরিত্রর সাফল্যে দারুণ খুশি তার স্কুল মেমারি বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের শিক্ষকরাও।