গত সপ্তাহে তার ডেরায় আট পুলিশকর্মীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করার পর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরপ্রদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী সে। অসংখ্য খুনের মামলা তার বিরুদ্ধে। কানপুরের ত্রাস বিকাশ দুবের অঙ্গুলিহেলনে নড়ে যোগীরাজ্যের মাফিয়া জগৎ। তবে তাকে নিয়ে গোটা দেশজুড়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গত সপ্তাহে চৌবেপুরের ঘটনার পরই। আর তাতেই যোগী সরকারের টনক নড়তে ৮ দিন ধরে তন্নতন্ন করে খুঁজে তাকে হাতে পাওয়ার পর এনকাউন্টার করা হল। কারণ কনভয়ের গাড়ি উল্টে যাওয়ার পরে পুলিশের পিস্তল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ। তবে এই ঘটনাক্রমকে অনেকেই ‘সাজানো’ ও ‘অতিনাটকীয়’ বলে দাবি করছেন ঘটনার পর থেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় একজন অপরাধীকে ধরার পরেও সে যদি পালানোর সুযোগ পায়, তবে কি তা পুলিশেরই ব্যর্থতা নয়?
একটি সূত্রের খবর, পালিয়ে বেড়ানোর সময়ে তিন-তিনবার পুলিশের সঙ্গে নিজে থেকে যোগাযোগ করেছিল বিকাশ। আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল। নয়ডা পুলিশ, দিল্লী পুলিশ ও রাজস্থান পুলিশ– তিন জায়গা থেকেই নাকি ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এর পরেই উজ্জয়ীনীতে কোনও এক তিওয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশ। এই তিওয়ারির ভাই আবার কানপুরের বড় ব্যবসায়ী। জানা গেছে, এই তিওয়ারিই বিকাশকে মহাকাল মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা বানিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই পুলিশ ধরে বিকাশকে। তবে তার গ্রেফতারির পর থেকেই উঠেছে নানা প্রশ্ন। একাংশের মতে এটা পরিকল্পিত আত্মসমর্পণ। ইচ্ছে করেই মহাকাল মন্দিরকে বেছে নিয়েছিল বিকাশ, যেন ভিড়ের মধ্যে তাকে এনকাউন্টার না করতে পারে পুলিশ এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পুলিশই এর পরে ‘সাজানো এনকাউন্টারের’ পরিকল্পনা করে। কারণ এত বছর ধরে যে অপরাধের জাল বিকাশ বুনেছিল, তাতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলেরও যোগ ছিল বলেই ধারণা অনেকের। ফলে বিকাশ ধরা পড়লে বিপজ্জনক কোনও তথ্য সামনে চলে আসতে পারত, যা হয়তো নানা মহলের অস্বস্তির কারণ হতো। সেই কারণেই কি শেষ করে দেওয়া হল বিকাশকে? এই প্রশ্নই ঘুরছে নেট দুনিয়ায়। বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ যেমন টুইট করেছেন, উঁচুতলার রাজনীতিকদের সঙ্গে বিকাশের যোগাযোগ যাতে সামনে না আসে, সে জন্যই খুন করে মারা হল তাকে। অখিলেশ যাদবও সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, আসলে কনভয়ের গাড়ি উল্টোয়নি, সরকার উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাতেই এমনটা ঘটানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার হয়েছিল কানপুরের কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় তাকে তুলে দেয় উত্তরপ্রদেশে পুলিশের এসটিএফের হাতে। বিকাশকে উজ্জয়ীনী থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল উত্তরপ্রদেশের শিবলিতে। শুক্রবার সকালে কানপুরের কাছে এসে উল্টে যায় কনভয়ের একটি গাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই গাড়িতেই ছিল বিকাশ। গাড়ি উল্টে যাওয়ার পরে পুলিশের পিস্তল ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ। পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে গুলিও চালায় সে। সেই সময় আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। দু’পক্ষের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে গ্যাংস্টারের। এই এনকাউন্টারের বর্ণনাই এখন ঘুরছে যোগীর পুলিশের মুখে। যা অনেকের কাছেই ‘অতিনাটকীয়’ ঠেকছে।