কেন্দ্রের একের পর এক জনবিরোধী পদক্ষেপের জেরে দেশের আর্থিক অবস্থার তুমুল অবনতি ঘটেছে। সেই আর্থিক ঘাটতি সামাল দেওয়ার জন্যে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ পর্যন্ত করতে হচ্ছে মোদী সরকারকে। ফলে কোষাগারের অবস্থা যে এখন ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’, তা বলাই বাহুল্য। এবার এই কারণ দেখিয়েই কর্মচারী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) ন্যূনতম মাসিক পেনশন বৃদ্ধি করতে পারছে না বলে হাত তুলে দিল কেন্দ্র। একই কারণে কোশিয়ারি কমিটির ইপিএফ পেনশন বৃদ্ধি সংক্রান্ত সুপারিশও মানা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা।
সোমবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষকুমার গাঙ্গোয়ার লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালের এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিমের (ইপিএস) আওতায় সরকারি শেয়ারের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখেই এমপ্লয়িজ পেনশন ফান্ডকে রক্ষা করতে হচ্ছে। আর যার জেরে ইপিএফের ন্যূনতম মাসিক পেনশন বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোশিয়ারি কমিটির সুপারিশও মেনে চলা যাচ্ছে না। ইপিএস নিয়ে সংসদে কেন্দ্রের এহেন লিখিত জবাবে মনে করা হচ্ছে, ইপিএফের ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধির সম্ভাবনা আপাতত বিশ বাঁও জলে চলে গেল।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ইপিএফের ন্যূনতম মাসের পেনশন এক হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি ইস্যুতে টালবাহানা করছে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রক। কয়েকমাস আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের আওতাধীন কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংগঠনের (ইপিএফও) অছি পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এর পরিমাণ বাড়ানো হবে। কিন্তু সেই বর্ধিত পেনশনের পরিমাণ কত হবে, তা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি।
উল্লিখিত বৈঠকের সময় কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী তথা পদাধিকার বলে ইপিএফও’র চেয়ারম্যান গাঙ্গোয়ার প্রতিনিধিদের জানিয়েছিলেন, ইপিএফের বর্ধিত ন্যূনতম মাসিক পেনশনের পরিমাণ চূড়ান্ত করতে খুব শীঘ্রই ফের ইপিএফও’র অছি পরিষদের বৈঠক ডাকা হবে। যদিও তা নিয়ে সরকার এখনও কোনও উচ্চবাচ্য করেনি বলেই অভিযোগ। যা নিয়ে সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির মধ্যেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। এই পরিস্থিতিতে যেভাবে কার্যত কোষাগারে অর্থাভাবের কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সংসদে মেনে নিয়েছেন, তাতে এই পেনশন বৃদ্ধি ইস্যুতে নতুন করে জল্পনা ছড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ইপিএস নিয়ে কোশিয়ারি কমিটি কেন্দ্রকে যে সুপারিশ করেছিল, তাতে ন্যূনতম মাসিক পেনশন তিন হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি, মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণেই সংশ্লিষ্ট সুপারিশ মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিমের আওতায় থাকা পেনশন প্রাপকেরা মাসিক ন্যূনতম এক হাজার টাকা করে পেনশন পাচ্ছেন। যদিও এই ইস্যুতে বিভিন্ন সময় একাধিক পেনশনার্স সংগঠন তাঁকে যে ইপিএফের ন্যূনতম মাসিক পেনশন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী।