অক্লান্ত পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফসল- নোবেল পুরস্কার পেল অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় কিন্তু পুরনো যে কোন কাগজ বা নেটে দেখুন, সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। আপনারা ও দিয়েছেন।
এ দেশে প্রচুর মানুষ গরুর মাংস খান। যেভাবে বিফ স্টেক, বিফ মালাই, বিফ ভুনা শহুরে মানুষের কাছে অতিব সুখাদ্য, লিবারেল সাজার দেখনদারি ও বটে। গ্রামের মানুষের কাছে ও বিফ ছিল সস্তায় প্রোটিনের উৎস কিন্তু জানের চেয়ে মাংস দামি নয়। দিলীপ ঘোষ এখানে ও হাজির। ঘরে ঘরে দিলীপ ঘোষের নাম জনপ্রিয়।
আজ গ্রামের মানুষ অতশত না জেনে দুটি লাইন মাথায় রেখেছে দেখলাম। গরুর দুধে সোনা আছে আর দেশী গরুই মা। বিদেশী গরু আন্টি। কয়েকজনকে যাচাই করার জন্য ফোন ও করেছিলাম। তারাও দেখলাম এটাই বিশ্বাস করে যে গরুর দুধ সুষম খাদ্য। একজন তো একধাপ এগিয়ে বললো, হলদে পদার্থটা নাকি বিশল্যকরণীর চেয়ে ও দামি। এরা বিফ স্টেক খেতে খেতে দিলীপ ঘোষ নিয়ে জোকস শেয়ার করেনি ফেসবুকে কিন্তু বাড়িতে গরু পোষে, গনেশ দুধ খেয়েছিল বিশ্বাস করে, তৃণমূল সাইকেল দিলে আনন্দিত হয় বা ভোট দিতে না দিলে রেগে যায়, তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে বিজেপি কে ভোট দেয় আর যে যার মতো তুলশীতলায় বাতি জ্বালায় বা আজান দেয় ভোরে। অতশত ফ্যাসিবাদের স্বরূপ অন্বেষণে ব্যস্ত থাকেনা কিন্তু বিশ্বাস করে নতুন দলে, যে হবে শক্তিশালী। আর সেই দল যুদ্ধ করে সব ঠিক করে দেবে। তার দেখানো শত্রুরা নিপাত যাবে।
দিলীপ ঘোষ যাদবপুর প্রেসিডেন্সিতে পড়েননি। পড়ার যোগ্যতা ও অবশ্য ছিল না। আমার ও নেই, কারণ নম্বর অত ছিল না। কিন্তু যাদবপুরের প্রাক্তনীরা (অনেকেই প্রথিতযশা) ঘৃণা করতে বা মস্করা করতে কিন্তু একজনকেই বেছে নিয়েছেন। দিলীপ ঘোষ। খোঁজ নিয়ে দেখুন, ঘরে ঘরে মানুষ দিলীপ ঘোষকে চেনে। বিজেপি মানে দিলীপ ঘোষ বোঝে এখন।
দিলীপ ঘোষ হাফপ্যান্ট বয়স থেকে আরএসএস টা করছে। পরে সুদর্শনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। আপনি আরএসএসকে ঘেন্না করতে পারেন কিন্তু আরএসএস আর যাই হোক আপনার পাড়ার শান্তি সংঘ ক্লাব না। বামেদের এর থেকে ও মারাত্মক এর শৃঙ্খল। এর প্রধান দপ্তরে রীতিমতো হোলটাইমার লোক রাখা থাকে সাংগঠনিক ব্লুপ্রিন্ট এলাকা ধরে ধরে ঠিক করার জন্য। দিলীপ ঘোষকে বোগদা ভাবতে পারেন, বিপ্লব দেবকে আবোদা ভাবতে পারেন, তথাগতকে বুড়োর ভীমরতি ভাবতে পারেন কিন্তু জেনে রাখবেন সেই আবালপনা ও তারা কোন এক বা একাধিকজনের অঙ্গুলিহেলনে করছে। আর সব জেনে বুঝেই করছে৷
হলফ করে বলছি। ভোটের দু’মাস আগে থেকে মানুষের এই সব বোকা বোকা কথা মনে থাকবে না। তখন স্রেফ যুদ্ধ, গরু, বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী, গোমাতা, যাদবপুর মানে মাওবাদী, বিজেপিকে মারতে এলে খুন করে দেবো গোছের কথাই মনে থাকবে। কিন্তু আপনাদের মনে থাকবে।
আর আপনারা ভুলে যাবেন গ্যাসের দাম আরো বেড়ে গেছে, দিল্লিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোটা পুলিশ ক্ষুব্ধ আর তারা রাস্তায় নেমে হায় হায় করছে, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর দিল্লি আর সবচেয়ে দূষিত নদী গঙ্গা ও যমুনা, ৭০ বছরের সবচেয়ে বেকারত্ব এই বছর, হেন কারেংগা ত্যান কারেংগা করে ও কাশ্মীরে রোজ মানুষ মরছে আর নাগাল্যান্ড আলাদা দেশ হয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে, অর্থনীতি ভয়াবহ জায়গায়।
খোঁজ করে দেখুন এগুলো নিয়ে লেখা হলো কিনা। হয়নি কারণ আপনার ও মুচমুচে সুস্বাদু খবর খেতে ভালো লাগে। সারাদিনের ক্লান্তির পরে একটু এন্টারটেইনমেন্ট আপনার ও দরকারী। আর তাই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট এখন টিকটক আর এই মন্দার বাজারে ও আপনার স্টার বা কালারসটা দিব্ব ব্যবসা করে কিছু বোকা বোকা সিরিয়াল দেখিয়ে।
আজ ফেসবুকে হোয়াটসঅ্যাপ এ কিন্তু গোয়াল, গরু, গরুর দুধই দেখতে পেলাম। ওটাই তো দিলীপ দার লক্ষ্য ছিল৷ আসল ইস্যুগুলো পিছনের সারিতে চলে যাক, মানুষ ভুলে যাক ভারতের সবচেয়ে বড় Human Error আসলে NRC। মানুষ ভুলে যাক এক হিন্দুকে এক ধাক্কায় দেশহীন করে দিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল, বিনা চিকিৎসায় সে মারা গেছিল, ঘরের লোক লাশ নিতে চায়নি প্রতিবাদে কারণ মরার পরে ও তাকে শ্মশানে প্রমান দিতে হতো সে ভারতীয়।
গরুর দুধে সোনা আছে কিনা জানিনা কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেলস আছে। গরুর মাংস খান কিন্তু দুধ ও খান। বুদ্ধি বাড়বে আর তখন না হয় বিচার করা যাবে কে আসলে বেশী গর্ধব!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত