দিন কয়েক আগেই ইংল্যান্ডের সমীক্ষা সংস্থা কম্প্রিটেকের এক সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছিল, নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালানোয় বিশ্বে তৃতীয় ভারত। তবে এবার আর দেশ নয়, বিদেশের মাটিতে বসেও ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল। খোদ হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষই এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ২০টি দেশের প্রায় ১৪০০ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে এমন ‘স্পাইওয়্যার’ ঢোকানোর চেষ্টা করেছিল ইজরায়েলের একটি সংস্থা। বিশেষ করে টার্গেট ছিল ভারতীয় সাংবাদিক, কূটনীতিক, পদস্থ সরকারি কর্তা ও মানবাধিকার সংগঠনের পদাধিকারীরা।
জানা গেছে, এই প্রযুক্তি বা সফটওয়্যারের সাহায্যে ব্যবহারকারীর প্রায় সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তবে তার আগেই হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা প্রযুক্তি সেটা ধরে ফেলে। ফলে শেষ পর্যন্ত ওই সংস্থার চেষ্টা সফল হয়নি। ইজরায়েলের সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ওই সংস্থা এনএসও-র বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা। পাশাপাশি এই সপ্তাহেই যাঁদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার কথাও বলা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের তরফে। তবে ইজরায়েলের ওই সংস্থার দাবি, এই অভিযোগ মিথ্যা। তারাও এর বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
প্রসঙ্গত, হোয়াটসঅ্যাপের প্রযুক্তি ছিল এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড। অর্থাৎ শুধুমাত্র যাঁদের মধ্যে ভয়েস বা ভিডিয়ো কল কিংবা মেসেজ চালাচালি হচ্ছে, তাঁরা ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কেউ জানতে পারবে না। কেউ সেটা অ্যাকসেস করতে অর্থাৎ দেখতে পারবে না। এমনকী হোয়াটসঅ্যাপে কর্তৃপক্ষও নয়। অন্যদিকে, যাঁদের অ্যাকাউন্টে এই প্রযুক্তি ঢুকিয়ে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল, তাঁরা এত দিন পর্যন্ত কিছু জানতে পারেননি। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠছে যে, হোয়াটসঅ্যাপের অত্যন্ত সুরক্ষিত প্রযুক্তিও কি এবার প্রশ্নের মুখে? যদিও হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে, অ্যাকাউন্টগুলি আগের মতোই সুরক্ষিত।
উল্লেখ্য, স্পাইওয়্যার আসলে এক ধরনের সফটওয়্যার বা প্রযুক্তি যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর অজান্তেই তাঁর মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আক্রান্তের পাসওয়ার্ড, কনট্যাক্ট লিস্ট বা ফোন নম্বরের তালিকা, ক্যামেরা, ছবি-সহ প্রায় যাবতীয় তথ্যের অ্যাকসেস পেয়ে যায় আড়ি পাতা ব্যক্তি বা সংস্থা। হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে সেই স্পাইওয়্যারের নাম ছিল ‘পেগাসাস’। ভিডিও কলের সময়, যাঁকে ভিডিও কল করা হচ্ছিল, তাঁর মোবাইলে একটি ‘বাগ’ বা ‘ম্যালওয়্যার’ সক্রিয় হয়ে করার চেষ্টা হয়েছিল। যা সফল হলেই পাওয়া যেত ব্যবহারকারীর প্রায় সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য। এমনকি, রিসিভার কলের উত্তর দিতে না পারলে বা ইচ্ছাকৃত ভাবে কেটে দিলেও তার থেকে মুক্তি পেতেন না।
হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এ বছরের এপ্রিলে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত এই উপায়ে আড়ি পাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েলের ওই সংস্থা। মে মাসে ‘সাইবার অ্যাটাক’-এর ঘোষণাও করেছিল মার্ক জাকারবার্গের সংস্থা। তবে তাদের দাবি, সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তার আগেই তাদের সুরক্ষা প্রযুক্তি এই আড়ি পাতার চেষ্টা ধরে ফেলেছে। তবে ভারতের কতজনকে টার্গেট করেছিল ইজরায়েলের ওই সংস্থা, তার স্পষ্ট কোনও জবাব দেয়নি মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা। শুধু জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য যাঁদের যাঁদের টার্গেট করা হয়েছিল, সবাইকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।