সোমবার দুপুরেই অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের খবর মিলেছে বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর ঠিক তার পরই মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখ খুললেন তিনি। অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর সাংবাদিকরা তাঁর কাছে দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তখন তিনি জবাবে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ভারতীয় অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা থেকে বলা সম্ভব নয়, যে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের এ হেন মন্তব্যে অস্বস্তিতে মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের বহু সিদ্ধান্তেরই কট্টর সমালোচক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন, নোটবন্দী। কিছুদিন আগে একটি বাংলা দৈনিকে তিনি বলেছিলেন, মোদী যে কার পরামর্শে সিদ্ধান্ত নেন এবং কার সমালোচনায় কর্ণপাত করেন, দেশবাসীর কাছে তা রহস্য। মোদী নিজের ভুল স্বীকারও করেন না। ‘পুরনো ও জটিল ব্যবস্থাকে সরল, কার্যকর, স্বচ্ছ করার প্রতি মোদীর একটা আগ্রহ’ থাকলেও, তা নিয়ে গণতান্ত্রিক আলাপ–আলোচনার মধ্যে না গিয়ে তিনি ‘টেকনোক্র্যাটিক, প্রযুক্তি ও প্রশাসন–নির্ভর’ সমাধান খোঁজেন। অভিজিতের মতে, মন্দ অর্থনীতি দেশের মন্দই করে এবং নোটবন্দী তারই উদাহরণ। তাঁর সহজ যুক্তি, মানুষের হাতে টাকা কম থাকলে তাঁরা খরচও কম করবেন। ফলে বাজার সঙ্কুচিত হবে। নোটবন্দীর ফলে ঠিক সেটাই হয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির এই অর্থনীতির শিক্ষক বরাবরই ভারতের দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পগুলোর সমালোচক। মনমোহন সিং সরকারের সময় তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভারতে এত প্রকল্প থাকলেও কাজ হয় না কেন? তাঁর বক্তব্য ছিল, না হওয়ার কারণ সেগুলির নকশাটাই ঠিক মতো তৈরি করা হয় না। এই প্রকল্পগুলোতে আরও টাকা খরচ করা উচিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক হয়, যদিও বিতর্কটা হওয়া উচিত টাকাটা খরচ করার শ্রেষ্ঠ উপায় কী তা নিয়ে। আর মোদী জমানায় মূল্যস্ফীতির হার কমানোতেই কৃষিসঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে মত তাঁর। তিনি জানান, খাবারের দাম কম রাখতে সরকার যেমন একদিকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করেছে, অন্যদিকে প্রচুর আমদানিও করেছে।
উদাহরণ হিসাবে তিনি এ-ও বলেন, ২০১৬ সালে অতিরিক্ত ডাল উৎপাদনের পরেও সরকার ৬০ লক্ষ টন ডাল আমদানি করেছিল। ফলে দেশের চাষির ফসল বাজারে দাম পায়নি। মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে এভাবে চাষির স্বার্থ মোদী সরকার ‘বলি দিয়েছে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন। সেইসঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনাও চাষিদের সুরক্ষিত করতে পারেনি। কারণ, ফসলের ক্ষতি মাপার পদ্ধতি এখনও সম্পূর্ণ কর্মীনির্ভর, অথচ কৃষি মন্ত্রক বা বিমা কোম্পানিরা যথেষ্ট কর্মী নিচ্ছে না। আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে স্বাস্থ্যবিমার বিষয়টিও একই সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, এর জন্যেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা হয়নি। কোন অসুখের চিকিৎসার ব্যয় কতটা ধরা হবে, ‘ক্লেম’ হলে তা খতিয়ে দেখতে কত কর্মী লাগবে, সেই সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরি না করেই কী করে একটা নীতি কী করে চালু করে দেওয়া যায়, সেটা তাঁর কাছে বিস্ময়কর।