হাতের কাছে যাকে পাচ্ছে, গিলে খাচ্ছে। চৌহদ্দির মধ্যে কোনও তারা ধরা দিলে একেবারে চিবিয়ে ফেলছে। প্রচণ্ড ‘খাই খাই’ স্বভাব এই দৈত্যাকার ব্ল্যাক হোলের। তার খিদে যেন আর মিটছেই না। দিনে তিন বার ভুরিভোজ সারে এই ব্ল্যাকহোল। পৃথিবী থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এই রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের ঠিকানা। বিজ্ঞানীরা নাম রেখেছেন জিএসএন-০৬৯। নাসা এর আগে আবিষ্কার করেছিল দু’টি স্টেলার-মাস। ব্ল্যাক হোল, সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ। এই ব্ল্যাক হোলটিও বিশালাকৃতি। আকারে-আয়তনে চারটে চাঁদের সমান। এর খিদেও সর্বগ্রাসী। শুধু নক্ষত্র নয়, গ্যালাক্সির কাছাকাছি চলে আসা যে কোনও মহাগাজতিক বস্তুকে নিজের দিকে বিপুল অভিকর্ষজ বলের ক্রিয়ায় টেনে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে সে। মহাকাশের এই রাক্ষসকে লেন্সের ভিতরে বন্দি করতে বহু বছর ধরেই চেষ্টা করছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। শেষমেশ ধরা দিল সে।
ইএসএ-র জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিওভান্নি মিনিউত্তি বলেছেন, ‘‘কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোলের সমসময় একটা খাই খাই ভাব থাকে। এরা সাধারণত কোনও গ্যালাক্সির মাঝখানে অর্থাৎ কেন্দ্রে (Center) অথবা গ্যালাক্সির চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। জিএসএন-০৬৯ গ্যালাক্সির মাঝে বসে উদরপূর্তি করে চলেছে। এমন রাক্ষুসে খিদে আমরা এর আগে কখনও দেখিনি।’’
মহাকাশবিজ্ঞানীদের কথায়, সাধারণত কোনও তারা কাছে এসে পড়লে তাকে গিলে খেতে এমন ধরণের রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের সময় লাগে এক থেকে দু’-তিন বছর। কোনও তারাকে যদি ব্ল্যাকহোল গিলে খেত, তা হলে আলোর ঝলসানি দেখা যেত এক থেকে দু’-তিন বছর ধরে। এক্ষেত্রে আলোর ছটা দেখা গেছে ৫৪ দিন ধরে। এতএব শুধু তারা নয়, প্রচণ্ড গ্যাসীয় কোনও পিণ্ডকেও খেয়ে চলেছে এই ব্ল্যাক হোল। যার কারণে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যে তীব্র গতিতে এক্স-রে নির্গত হচ্ছে য়েটা ২০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। ২.৫ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা তৈরি হচ্ছে।
নাসার চন্দ্রা এক্স-রে অবজ়ারভেটরি (Chandra X-ray Observatory) এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) এক্সএমএম নিউটন (XMM-Newton) বড় বড় চোখ করে দেখল, কী ভাবে গ্যালাক্সির ভিতরে ঘাপটি মেরে থেকে নিজের শিকার ধরছে এই ব্ল্যাক হোল। সেই সঙ্গে মহাকাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে উজ্জ্বল আলোর স্রোত।