গত শনিবার হিন্দী দিবসের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হিন্দী ভাষাকে দেশের সাধারণ ভাষা করার পক্ষে জোর সওয়াল করার পর থেকেই বিরোধিতায় ঝড় উঠেছে দেশের বিভিন্ন মহলে। শাহর এই ‘এক ভাষা, এক দেশ’ তত্ত্বকে কটাক্ষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম বানানো হিড়িকও পড়ে গেছে নেটিজেনদের মধ্যে।
‘হিন্দি কি কেউ সাধে বলে নাকি?’ সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে বলেছিলেন জটায়ু। আম-বাঙালির ঠোঁটস্থ এই সংলাপ। তবে ‘সাধ’ না থাকলেও হিন্দীকে চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ অন্য ভাষাভাষীরা, বাঙালিরা তো বটেই! যে কারণে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ‘এক দেশ, এক ভাষা’র ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভে ফুটছে সোশ্যাল মিডিয়া। আর সেই ক্ষোভে যোগ হয়েছে ব্যঙ্গের ফোড়ন। এ ক্ষেত্রে ‘অনিচ্ছুক’ হিন্দিভাষী বাঙালির আইকন হয়ে উঠেছেন সন্তোষ দত্ত অভিনীত রহস্য-রোমাঞ্চ-ঔপন্যাসিক জটায়ুর চরিত্রই।
হিন্দী চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ‘সোনার কেল্লা’র ওই কাল্ট দৃশ্যের ছবি দিয়ে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে অজস্র মিম। জটায়ুর হাতে সেখানে নিজে নিজে হিন্দী শেখার বই, মুখে অননুকরণীয় হাসি! ‘সোনার কেল্লা’র ঐতিহ্য বজায় রয়েছে হালের ‘প্রাক্তন’ ছবিতেও। সেখানেও একটি দৃশ্যে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রেলের কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টকে ভর্ৎসনা করছেন, ‘ওই যে এক ঘাটের মড়া এসি হ্যায়, চলতা হি নহি! আমার স্বামী কত চেষ্টা করতা হ্যায়…’
এই দুই দৃশ্যেই যোগসূত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। জটায়ুর হিন্দী শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি হিন্দিটা চালিয়ে যেতে পারেন, বেশ লাগছে।’ আর ‘প্রাক্তন’-এ সাবিত্রীকে তিনি বলছেন, ‘তুমি তো ভয়ঙ্কর রকমের হিন্দি বলছ!’ এই ‘ভয়ঙ্কর’ হিন্দীতেই মজার ছলে এক গর্বিত বাঙালি হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিন্দী আগ্রাসনকেও। বলেছে, ‘হ্যাঁ তোমরা বাঙালির উপরে হিন্দী চাপিয়ে দিতে পার, কিন্তু তুম খুব রিগ্রেট করেগা।’ সেই হুঁশিয়ারিও ভাইরাল। তবে বাঙালির ব্যঙ্গের পুরোভাগে ছিলেন অবশ্য জটায়ুই। তাঁর সুরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালির শপথ, ‘কেউ হিন্দী চাপাতে এলেই শুনিয়ে দিতে হবে, তং মত করো!’
অন্যদিকে, খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরাও। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর একটি কার্টুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন । সেখানে দেখা যাচ্ছে জঙ্গলে বাঘ, হাতি, বাজপাখি, শেয়াল, শিম্পাঞ্জি সকলেই হাঁসের ডাক ডাকছে। তা দেখে জলাশয়ে একটি হাঁস আরেকটি হাঁসকে বলছে, আমরা ভাষা-নীতি নিয়ে বাড়াবাড়ি করিনি তো? আরেকটি ময়ূরের কার্টুনও ছড়িয়েছে টুইটারে, যার পেখমের নানা পালকে নানা ভাষার নাম। পাশের ছবিতেই দেখা যাচ্ছে ময়ূরের পেখমে কেবল একটিই পালক, তাতে লেখা ‘হিন্দী’।