অ্যান্টিগায় অবিশ্বাস্য জয় ভারতের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০০ রানে শেষ করে। ২০১৫ সালে নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৯ রানে অল আউট হয়ে যাওয়াই এত দিন ছিল টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও টিমের সর্বনিম্ন স্কোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সান্ত্বনা, সেটা অবশ্য পেরোন গেল। তৃতীয় দিনের শেষ ভারতের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৮৫ রান। বিরাট কোহলি ৫১ ও রাহানে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। রবিবার, চতুর্থ দিনের শুরুতেই অবশ্য কোহলির উইকেট হারায় ভারত। রোস্টন চেজের বলে ক্যাম্পবেলের হাতে ধরা পড়েন ক্যাপ্টেন কোহলি। এদিন তিনি কোনও রান যোগ করতে পারেননি। চতুর্থ উইকেটে বিরাটের সঙ্গে ১০৬ রান যোগ করেন রাহানে। সেটাই ভারতের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত। দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগরওয়াল সূচনা বেশ ভালোই করেছিলেন। ওপেনিং জুটিতে তাঁরা তোলেন ৩০ রান। আচমকাই মায়াঙ্ক১৬ রানে রোস্টন চেজের বলে আউট হয়ে যান। প্রথম ইনিংসের মতোই দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা ভালো করেও বড় রান পেলেন না লোকেশ রাহুল। ৩৮ রানে রোস্টন চেজের বলে বোল্ড হয়ে তিনি সাজঘরে ফেরেন। লাঞ্চের পর ভারতের তিনটি উইকেট পড়ে। তবে চেতেশ্বর পূজারার মতো তারকা ব্যাটসম্যানের অফ ফর্ম ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে পূজারা মাত্র দু’রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য পূজারাকে চেনা ছন্দে পাওয়া যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, তিনি বড় রান করেই মাঠ ছাড়বেন। কিন্তু কেমার রোচের বলে তিনি ডিফেন্স করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। ৫৩ বল খেলে ২৫ রান করেন পূজারা।
ব্যর্থতার কানাগলি থেকে সাফল্যের রাজপথে অজিঙ্কা রাহানে। গত দু’বছরে তাঁর ব্যাটে কোনও সেঞ্চুরি আসেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট সিরিজেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করার সুবাদে অ্যান্টিগা টেস্টে রাহানের জায়গায় খেলবেন রহিত শর্মা। কিন্তু ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রী আস্থা রেখেছিলেন রাহানের উপরেই। আর সেই আস্থার পূর্ণ মর্যাদা রেখে দারুণ কামব্যাক করলেন ‘টিম ইন্ডিয়া’র ভাইস-ক্যাপ্টেন। প্রথম ইনিংসে তিনি অনবদ্য ৮১ রান করেছিলেন। সেঞ্চুরি না পাওয়ার আপসোস তিনি মেটালেন দ্বিতীয় ইনিংসে। ২৩৫ বলে টেস্ট কেরিয়ারে দশম শতরান পূর্ণ করার পর হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন রাহানে। পঞ্চম উইকেটে হনুমা বিহারিকে সঙ্গে নিয়ে ১২৬ রান যোগ করেন তিনি।
রবিবার রাহানে আবার দেখালেন কেন তিনি অপরিহার্য। প্রথম ইনিংসে ৮১ রান করেছিলেন। টিমের বিপর্যয় রুখেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁর ব্যাটেই এল ভরসা। ২৩৫ বল খেলে সেঞ্চুরি করেছেন রাহানে। দেখালেন, কাকে বলে ধৈর্য! এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে যেটা প্রায় অদৃশ্য হয়ে যেতে বসেছে। টেস্টের ধর্ম মেনে বল ছেড়েছেন নিখুঁত ভঙ্গিতে। শনিবার একবার ভুল করে ক্যাচ দিয়ে ফেললেও রবিবার একেবারেই পরিষ্কার ইনিংস খেলেছেন রাহানে। চেতেশ্বর পূজারার ব্যাটে বড় রান আসেনি। সেই অভাব পূরণ করলেন রাহানে।