দেশজুড়ে গণপিটুনি ও ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলে অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনদের পাশাপাশি সরব হয়েছিলেন তিনিও। দেশের বিশিষ্টদের সঙ্গে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এর জেরে লাগাতার ট্রোলিং ও হুমকির ফলে কিছুদিন আগেই নিজের টুইটার হ্যান্ডল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এবার তাঁর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ নিয়ে বিজেপির কোপে পড়লেন অনুরাগ কাশ্যপ।
নেটফ্লিক্স হাল আমলে বিনোদনের এক অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। এখানেই ইদানীং মুক্তি পাচ্ছে একের পর এক সাড়া জাগানো সব ওয়েব সিরিজ, যেগুলি রীতিমত উচ্চ প্রশংসিত এবং সমাদৃত হচ্ছে দর্শকমহলে। তেমনই একটি ওয়েব সিরিজ হল সেক্রেড গেমস। যা পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন অনুরাগ। গত ১৫ আগস্টই মুক্তি পেয়েছে সেক্রেড গেমসের দ্বিতীয় সিজন। কিন্তু এই ওয়েব সিরিজ নাকি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে! এমনই অভিযোগ তুলে অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ২ বিজেপি নেতা।
দিল্লী বিজেপির মুখপাত্র তেজিন্দর পাল সিংহ বাগগার অভিযোগ, নেটফ্লিক্সের হিন্দি ওয়েব সিরিজ অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত ‘সেক্রেড গেমস ২’ তে ইচ্ছাকৃতভাবে শিখদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে দিল্লী বিজেপির মুখপাত্র জানান, মঙ্গলবার পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেক্রেড গেমস ২ এর একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছে, একজন শিখ ধর্মাবলম্বীর চরিত্রে অভিনয় করা সইফ আলি খান তাঁর মাথার ‘কাড়া’ ছুঁড়ে ফেলেছেন। যা শিখদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অসম্মান করেছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতার।
অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, সংশ্লিষ্ট ওয়েব সিরিজে শিখদের অপমান করা হয়েছে। অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারায় পবিত্র জিনিসকে অসম্মান, ধর্মীয় আবেগকে আক্রমণের অভিযোগে ১৫৩, ১৫৩এ ধারায়, ৫০৪ ধারায় শান্তি বিঘ্নিত করা এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৫০৫ ধারায় মামলা দায়ের করার আবেদন করেন ওই বিজেপি নেতা। অন্যদিকে, রাজৌরির বিজেপি বিধায়ক মনজিন্দর সিংহ সিরসা কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে অভিযোগ দায়ের করে অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২৩ মে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের ঠিক পরের দিনই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের কুকাজের খবর তুলে ধরে মোদীর উদ্দেশ্যে একটি টুইট করেছিলেন অনুরাগ। টুইটে তিনি লেখেন, ‘মোদী স্যর, বিরাট জয়ের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। কিন্তু দয়া করে আমায় বলুন একজন ভক্ত হিসেবে আমি আপনার অনুগামীদের কীভাবে সামলাবো? জয়ের পর ওঁরা সেলিব্রেশনের সময় আমার মেয়েকে মেসেজ করে ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছেন।’ পাশাপাশি, মোদী সমর্থক কী মেসেজ করেছে, সেটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন অনুরাগ।
এরপরই গেরুয়া শিবিরের কোপের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। যার ফলে অবশেষে তিতিবিরক্ত হয়ে কিছুদিন আগেই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টটি ডিলিট করে দেন অনুরাগ। তবে তার আগে তিনি লেখেন, ‘যখন আপনার বাবা-মা হুমকি ফোন পায়, যখন আপনার মেয়ে অনলাইনে হুমকি পায়, তখন মনে হয়, কেউ আছেন, যাঁরা মুখের কথা শুনতে চান না। তাই যে দেশে আমার কথা বলার স্বাধীনতা নেই, সেখানে আমার কথা না বলাই ভালো। এটাই হয়তো আমার শেষ টুইট…।’ এই কারণেই এবার ঘুরপথে অনুরাগ কাশ্যপকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।