বাংলায় বর্ষা ঢুকব ঢুকব করছে। আর বর্ষাকাল বলতেই বাঙালি বোঝে ইলিশ মাছ। তাই বাঙালির পাতে মরশুমের প্রথম ইলিশ পড়তে অপেক্ষা মাত্র আর কয়েকদিনের। তারপরেই ইলিশ পাতুরি, ইলিশ ভাজা, কিংবা ইলিশের ঝোলে মজবে সবাই।
আজ থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে দু’মাসের জন্যে আর কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকল না। তাই খুব বেশি হলে আর মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের অপেক্ষা। গতকাল সকাল থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি ও সাগরদ্বীপের ঘাটগুলিতে ছিল সাজসাজ রব৷ ট্রলারে ট্রলারে শুরু হয়েছে মা গঙ্গার পুজো। সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরে এখন অপেক্ষায় কয়েক হাজার মৎস্যজীবী ট্রলার।
ইলিশ ধরার জাল, বরফ, জ্বালানি তেল, খাবার ও আনুসঙ্গিক সমস্ত কিছু ট্রলারে মজুত করার কাজ চলছিল৷ সপ্তাহ খানেক ধরেই ট্রলারগুলিকে প্রস্তত করা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম মেনে ইতিমধ্যেই ট্রলারে পড়েছে কমলা রঙের পোচ৷ রাজ্য মৎস্যদফতরও ট্রলারগুলির বৈধ ছাড়পত্র তুলে দিচ্ছে। বুধবার দুপুরে কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে ট্রলার মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৪৬টি ড্যাট যন্ত্র (দূর নিয়ন্ত্রক বিপদ সঙ্কেত যন্ত্র)। এই যন্ত্রের সাহায্যে সমুদ্রে বিপদ পড়লে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন মৎস্যজীবীরা। গত বছরের দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে মৎস্যজীবীদের লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আরও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কি না, সেদিকে নজর রেখেছেন মৎস্য দফতরের আধিকারিক থেকে মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্মকর্তারা।
আজ ভোর রাত থেকে ট্রলারগুলি গভীর সমুদ্রে রওনা দিয়েছে। খুব বেশি হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তা ঘাটে ফিরবে বলে মনে করছেন মৎস্যজীবী সংগঠনের কর্তারা৷ ইতিমধ্যেই সাগরের আবহাওয়া মেঘলা৷ গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৃষ্টির সঙ্গে হালকা বাতাস বইছে৷ তাপমাত্রাও ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে৷ গভীর সমুদ্রে ইলিশ পাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই আদর্শ আবহাওয়া বলে মনে করেন প্রবীন মৎস্যজীবীরা৷
গত মরশুমে লাগাতার নিম্নচাপ, সেইসঙ্গে একাধিক দুর্ঘটনায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছিল ট্রলারগুলি। তারপরেও রেকর্ড পরিমাণে ইলিশ উঠেছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস না থাকায় আশায় বুক বাঁধছেন মৎস্যজীবীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই মরসুমে ইলিশের ওজন ও পরিমাণ বাড়বে বলেই মনে করছেন ট্রলার মালিকরা।
সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, ‘নিম্নচাপের আগাম সতর্কতা এখনও পাইনি৷ ফলে শুক্রবার ভোররাত থেকে মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে রওনা দিতে প্রস্তুত৷ আবহাওয়া সঙ্গ দিলে আশা করছি আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বাজারে চলে আসবে বঙ্গোপসাগরের রুপোলি শস্য৷’