নতুন বছরের শুরুতেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের সুখবর শোনালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি মাসেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করলেন মমতা। এরজন্য রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু অনটনের মধ্যেও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার বীরভূমের ইলামবাজারের কামারপাড়া ময়দানে এক জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে, বাংলায় গণতন্ত্র নেই, মোদীর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘বাংলায় গণতন্ত্র নেই বলে সরব হয়েছেন, তাঁদের জানিয়ে রাখি বাংলাই দেশকে শেখায়। কারণ বাংলাতেই সবচেয়ে ভাল গণতন্ত্র রয়েছে’।
এখন রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪৮ শতাংশ ডিএ বকেয়া রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি রাজ্য সরকারি কর্মীরা। এই ডিএ নিয়ে পূর্বের বাম সরকারের সমালোচনা করেন মমতা। বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলাকে অশান্ত করার অভিযোগও করেন তিনি। মমতা বলেন, ‘৪০ হাজার কোটি টাকা দেনা শোধ করে রাজ্য সরকার। এই রাজ্য থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্রীয় সরকার’। কেন্দ্রের মোদী সরকারের সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের হস্তক্ষেপ করছেন কেন্দ্রীয় সরকার। মানুষকে সুস্থ থাকতে দিচ্ছে না’।
বাংলার সরকারের কাছে কৃষকদরদী সাজা মোদী যে ডাহা ফেল, তা বোঝাতে রাজ্যের কৃষকদের সবার্থে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন মমতা। নতুন বছরের শুরুতেই কৃষকদের স্বার্থে কৃষকবন্ধু প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। যাতে কৃষক পরিবারের কারোর মৃত্যু হলে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবে। এমনকী বছরে একবার একর প্রতি চাষের জন্যও পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যও মিলবে। শস্য বিমার পুরো টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কৃষকদের সাবধান করে বলেন, ‘কোনওভাবেই ফড়েদের কথায় কান দেবেন না। সরকার সঠিক মূল্যে চাল কিনবে’। আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে ধান দিন, চেক নিন প্রকল্প। এতে ধান বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে হাতে হাতে চেক পেয়ে যাবেন কৃষকেরা।
বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘যাঁরা সারাদিন গরুপুজো করে চলেছেন আর রাম পুজোর দোহাই দিয়ে ভেদাভেদের রাজনীতি করছেন তাঁরা ভুলে গিয়েছেন রাম যাঁর পুজো করেছিলেন সেই দুর্গার পুজো করে বাংলা’।এই ভেদাভেদের রাজনীতিতে রাজ্যবাসী যেন কান না দেন সেই বার্তাই দেন মুখ্যমন্ত্রী।
একদিকে যখন মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি এবং উত্তর প্রদেশের আলু চাষিরা ফলনের উৎপাদন মূল্যও হাতে পাচ্ছেন না তখন মমতার একাধিক প্রকল্প যে ভোটবাক্সে বড় প্রভাব ফেলবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শুধু কৃষকদের জন্যই নয় ছাত্র-যুবদের কর্মসংস্থানেও রাজ্য সরকার বড় পদক্ষেপ করেছে। খেলোয়াড় কোটায় সাড়ে চার লাখ চাকরি হবে বলে এদিন ইলামবাজারের সভায় জানিয়েছেন মমতা। এছাড়া কন্যাশ্রী, যুবশ্রী প্রকল্প তো আছেই। মোটের উপর মোদী সরকারের একাধিক জনমোহিনী প্রকল্প মমতার এই বিপুল জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কাছে যে মুখ থুবরে পড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।