শরিকদের গলায় ক্রমেই প্রকট হচ্ছে বিজেপি বিরোধীতার সুর। রামমন্দির ইস্যুকে বিজেপির ‘জুমলা’ বলে কিছুদিন আগেই সরব হয়েছিল শিবসেনা। এবার সেনা তাদের মুখপত্র ‘সামনা’য় সাফ জানাল, লোকসভা ভোটের আগে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে কোণঠাসা করতেই অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ড সংস্থার ভিআইপি চপার দুর্নীতির মামলায় মধ্যস্থতাকারী ক্রিশ্চান মিশেলের বিস্ফোরক জবানবন্দির কথা কোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের দাবি, মিচেলের বক্তব্য কার্যত বিজেপির চক্রান্ত!
তবে এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে এ দিন রাফাল নিয়েও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে শিবসেনা। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই দিল্লীর পাটিয়ালা হাউস কোর্টে ইডির তরফে দাবি করা হয়, জেরার সময় ক্রিশ্চান নাকি বলেছেন ‘মিসেস গান্ধী’ এবং ‘সন অব ইটালিয়ান লেডি’, ‘দ্যা নেক্সট প্রাইম মিনিস্টার অব দ্য কান্ট্রি’। কিন্তু কী সূত্রে মিশেল সোনিয়া গান্ধীর নাম করেছেন সেটা স্পষ্ট করে জানায়নি তারা। তবে এই কারণ দেখিয়ে ক্রিশ্চান মিশেলকে আরও বেশিদিন নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানায় ইডি।
শুধু তাই নয়, ইডির তরফে দাবি করা হয়েছে আইনজীবীকে একটি চিরকূট দিয়ে মিচেল নাকি জানতে চেয়েছেন ‘মিসেস গান্ধী’ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কী বলবেন। সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না হলেও ইডির এই দাবিকে হাতিয়ার করে গান্ধী পরিবারকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি। অর্থাৎ, ঘুরিয়ে এই চপার কেলেঙ্কারি মামলায় সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর নাম সুকৌশলে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়েই সোচ্চার হয়েছে শিবসেনা। তাদের দাবি, রাজনৈতিক বিরোধীদের বিঁধতে ইডির মতো সরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করছে মোদী সরকার।
তাদের বক্তব্য, ‘মিশেলকে এমন সময় দুবাই থেকে প্রত্যর্পণ করা হল, যখন ৫ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রচার পুরোদমে চলছে। আর অন্যদিকে বিজেপির ল্যাজেগোবরে অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন বেশ কিছু নির্বাচনী প্রচারে মধ্যস্থতাকারীর কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, অনেক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ বার আমরা বুঝতে পারছি, উনি কিসের ইঙ্গিত করছিলেন।’ মিশেলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই মোদী কী ভাবে গান্ধী পরিবারের দিকে আঙুল তুললেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে মূলত।
শিবসেনার কটাক্ষ, ‘মিশেলের প্রত্যাবর্তন সত্ত্বেও বিজেপি পাঁচ রাজ্যে হারল। এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ২০১৯-কে মাথায় রেখেই এই মিশন মিশেল।’ তাদের অভিযোগ, ‘এটা ২০১৯-এর ভোটের আগে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা। কোয়াত্রাচ্চির পর এবার দেশে মিশেল পুরাণ শুরু হবে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, কৃষক আত্মহত্যা, রামমন্দিরের মতো বিষয় এবার পিছনে চলে যাবে।’ জোটসঙ্গী হয়েও সম্প্রতি গেরুয়া শিবিরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে শিবসেনা। এবার তারা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোয় বিজেপির সেই মাথাব্যথা আরও খানিকটা বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।