অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পেরেছিলেন কিনা জানা নেই। কিন্তু বড়দিনের সকালে রোদ্দুরে মিশে গেলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২৫ মিনিট নাগাদ ৯৪ বছর বয়সে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
বেশ কিছু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন নীরেন্দ্রনাথ। সম্প্রতি শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে। কয়েক দিন আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে তাঁর হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হয়। সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেননি নীরেন্দ্রনাথ।
১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। পঞ্চাশের দশকে অবিভক্ত বাংলায় তাঁর লেখনি সাড়া ফেলে দিয়েছিল। নীরেন্দ্রনাথের শব্দের ধার সমাজকে বাধ্য করেছিল নতুন ভাবে ভাবতে। ছোটবেলা থেকেই ছড়া লিখতেন। ১৯৫৪ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’। তারপর একে একে ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘নিরক্ত করবী’, ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, ‘আজ সকালে’… অজস্র কবিতার বই। তাঁর লেখা কবিতা ‘অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল…’ বা ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়…’ বাঙালির কাছে রীতিমতো প্রবাদে পরিণত হয়েছে।
কবিতাই তাঁর প্রথম প্রেম। সংবাদপত্রে কাজের সুবাদে অজস্র গদ্যও লিখেছেন। বলতেন, ‘কবিতাকে ফাঁকি দিয়ে, তার থেকে সময় চুরি করে নিয়ে আমি গদ্যকে দিচ্ছি।’ তাঁর লেখা বেশকিছু ছোটগল্প ও উপন্যাস সাহিত্যপ্রেমীর কাছে কাছে চিরপ্রিয় হয়ে থাকবে। উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়াও ১৯৯৪ সালে উল্টোরথ পুরস্কার, ১৯৭০ সালে তারাশঙ্কর স্মৃতি, ১৯৭৬ সালে আনন্দ শিরোমণি পুরস্কার পান তিনি। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডক্টরেট দেওয়া হয় তাঁকে।
বাংলা সাহিত্য জগতে নীরেন্দ্রনাথের কবিতার রোদস্পর্শ ছুঁয়ে যাবে আমাদের, কিন্তু তাঁকে আর ছোঁয়া যাবে না কোনওদিন।