পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পালাবদল ঘটেছে। একমাত্র তেলেঙ্গানা বাদে বাকি রাজ্যগুলিতে শাসকদল এবং মুখ্যমন্ত্রীর বদলে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে। ফলে এই মুহূর্তে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হলেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলতি বছরের শুরুতে দেশে ৩ জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। রাজস্থানে হারার পর কুর্সি খোয়াতে হয়েছে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর তাজ ছিল মেহবুবা মুফতির মাথায়। কিন্তু বিজেপি সমর্থন তুলে নেওয়ায় তাঁকেও তাজ হারাতে হয়েছে। ফলে এই মুহুর্তে ভারতের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দেশের এক ও অদ্বিতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দখলে। কিন্তু বিরল কোন অর্থে?
কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলায় অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন মমতা। সে অর্থে এ রাজ্যের ইতিহাসে এই বিরল সম্মান আছে তাঁর দখলেই। রাজস্থানের ক্ষেত্রেও বসুন্ধরাই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনিও দ্বিতীয়বার এই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরপর নয়। মাঝে ছিল পাঁচ বছরের ব্যবধান। একমাত্র মমতাই টানা দু’বার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন। সেই দিক থেকে এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী একমাত্র বাংলার অগ্নিকন্যা।
অন্য দিকে তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা পাঁচবার মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হলেও পর পর দু’বার পূর্ণমেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। মমতা করেছেন এবং পেরেছেন।
একমাত্র দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত টানা তিনবার স্বপদে বহাল ছিলেন। তবে তিনিও এখন প্রাক্তনীদের তালিকায়। এই প্রসঙ্গে সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে শীলা বলেন, ‘আমি সহ প্রতিটি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীই প্রথমে ভোটে জিতেছিলেন, পরে হেরে ক্ষমতা হারিয়েছেন। হারলে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে সেটাই স্বাভাবিক। আমি খুশি যে মমতা সগৌরবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে রয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিতে আগামী ভোটে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি খুশি যে একমাত্র মমতাই আমাদের (মহিলাদের) হয়ে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন’।
শুধু মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেই নয়, মোদী বিরোধী লড়াইয়ে মমতাই যে বিরোধী জোটের মুখ হয়ে উঠছেন সেই দেওয়াল লিখনও এখন স্পষ্ট। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে মোদী বিরোধী সমস্ত শক্তির সমাবেশ ডেকেছেন তিনি। ফলে এই লড়াই মমতাকে জাতীয় স্তরে অন্য উচ্চতা দেবে সেটা বলাই বাহুল্য। এমনকি আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার লড়াইয়েও মমতা অনেকটা এগিয়ে থাকবেন বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও। এই দিক থেকেও বিরল কৃতিত্বের অধিকারী বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।