সারা বছর ডায়েট মেনে চললেও পুজোর সময় তা মেনে চলা অসম্ভব। পুজোর চারটে দিন প্যান্ডাল হপিং, বন্ধুদের সঙ্গে ইটিং আউট, বাড়িতে স্পেশাল মেনু, আর রাস্তার ফুচকা, এগ রোলের কথা বাদই দিলাম। আপনি এসব থেকে কত কাঁহাতক দূরে থাকবেন! ঠিক মুখ চলতে থাকবে। তাই স্ট্রিক্ট ডায়েট রেজিমের চিন্তা পুজোর কদিনের জন্য স্রেফ ঝেড়ে ফেলে দিন। তবে খাওয়াদাওয়ার বেনিয়ম করলে শরীর খারাপ হওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই সেই ব্যাপারে একটু খেয়াল তো রাখতেই হবে।
পুজোর সময় ভালো খাওয়াদাওয়া করেও শরীর সুস্থ রাখা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলাম ডায়েটিশিয়ান রঞ্জিনী দত্তকে। ‘অবশ্যই যায়’। এমনটাই আশ্বাস দিলেন তিনি। এটাও জানালেন “পুজোর চারটে দিন এটা খাবোনা ওটা খাবোনা বলা যায়না। তাতে পুজোর আনন্দটাই খানিক মাটি হয়। তবে বুদ্ধি করে খাওয়াদাওয়া করলে অ্যাসিডিটি ইত্যাদির মতো সমস্যাকে সহজেই এড়িয়ে চলা যায়। কেবল কয়েকটা কথা মাথায় রাখতে হবে।”
রঞ্জিনীর কথায় “পুজোর সময় বেলাগাম খাওয়াদাওয়ার কারণে, যতটা না শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তার চেয়েও বেশি হয় ভুল খাবার বাছার কারণে’’। সেটা কেমন ব্যাপার? “আসলে কেউ হয়তো ফুচকা খাওয়ার খানিক পরেই একটা এগরোল খেয়ে ফেললেন। তারপরেই চাট। আবার বিরিয়ানি খাওয়ার পরে পান্তুয়ার মতো ভাজা মিষ্টি খেয়ে নিলেন। এখানেই গণ্ডগোলটা হয়। আসলে ফুচকা আর এগরোল একই খাবারের গোত্রে পড়েনা। বিরিয়ানি ও পান্তুয়াও নয়। দুটো আলাদা গোত্রের খাবার খেলেই এই অ্যাসিডিটির সমস্যাটা হয়।” বেশ। বোঝা গেলো। তবে মানুষ বুঝবেন কি করে কোনগুলো একগোত্রের, কোনগুলো নয়? “এটা খুব সহজ। কুইজিনের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। বিরিয়ানি আর পান্তুয়া দুটো আলাদা কুইজিন। একটা মুঘলাই অন্যটা বাঙালি। পুজোর এক একদিন এক এক ধরনের কুইজিনের খাবার খান”।
আরও একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। বিরিয়ানির মতো হাই ফ্যাট ফুড খেতে হলে রাত ১০টার মধ্যে খেয়ে নিন। রাত দেড়টায় এইধরনের খাবার খাবেননা। আচ্ছা পুজোর সময় চটজলদি হজমের সমস্যার কোনও মুশকিল আসান আছে? “আছে। এখানেও একটু নিয়ম ভাঙা যেতে পারে। নন কোলা জাতীয় এয়ারেটেড ড্রিঙ্ক এই সময় জলদি হজমে সাহায্য করবে। আবার হজমের সমস্যা মেটাতে খয়ের ছাড়া মিষ্টি পানও খেতে পারেন।” ও হ্যাঁ । আরও একটা ব্যাপারও তিনি খেয়াল করিয়ে দিলেন। “ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে যেখানে সেখানে জল খাবেন না। প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটার খান। রেস্তরাঁতে গিয়েও তাই।”
আরও একটা খুব জরুরি টিপস দিয়েছেন রঞ্জিনী। “পুজোর চারটে দিন তো ভালো খাওয়া দাওয়া করবেনই। তাই মহালয়া থেকে পঞ্চমী বা ষষ্ঠী পর্যন্ত একটু খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে নজর রাখুন। এই কদিন ভাত, রুটি, চিনি, মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম বাদ। দুধ দিয়ে চা-কফিও চলবেনা। গ্রিনটি চলবে। দই, ছানা, স্প্রাউটস, এগ হোয়াইট, ফল, সবজি ইত্যাদি খান এই কটা দিন। তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার জল খেতে ভুলবেন না। ফল পাবেন হাতে নাতে। শরীর ডিটক্স হবে। চুল ও ত্বক ভাল হবে। চেহারায় একটা ইনস্ট্যান্ট গ্লো আসবে”।
আর একটা ব্যাপারেও জানাতে ভোলেননি তিনি। “পুজোর কিন্তু একটা ট্র্যাডিশনাল ইটিং প্যাটার্ন আছে। এই যে অষ্টমীতে নিরামিষ ভোগ খাওয়া, আবার নবমীর দিন মাংস খাওয়ার রীতি- এটা কিন্তু ব্যালান্সড ডায়েটের মধ্যেই পড়ে। তাছাড়া এই সময়েই নতুন ফুলকপি উঠছে, অর্থাৎ ভোগে ও তরকারিতে নানা মরশুমি সবজি পড়ছে। সেটাও যথেষ্ট হেলদি। তাই এগুলো তো চোখ বুজে নিশ্চিন্তে খাবেনই খাবেন।”
যারা ডায়াবেটিক তাঁরা কি খাওয়া দাওয়া থেকে বাদ পড়বেন? না। তবে “তাঁদের একটু অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। বাইরে না খেয়ে বাড়িতেই শেষ পাতে মিষ্টি খান। ভাতের পরিমাণ অবশ্যই কম হবে। এবং পাতে পাঁচ মিশালি পদের একটা সবজিও থাকতে হবে। তবে এটা কিন্তু এক দুদিন চলতে পারে সারা বছর নয়”। সাবধান করে দিলেন তিনি।