রবিবার দিনটা কেমন কাটে আপনার? সারাদিন ঘুমিয়ে? কিংবা বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখে? অর্থাৎ দিনটা আলসেমি করেই কাটিয়ে দেন। তাইতো? কপালে দুঃখ আছে। ‘মান-ডে ব্লুস’-এর জ্বালায় নির্ঘাৎ নীল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
অবাক হয়ে ভাবছেন – এ আবার কেমন কথা! সারা সপ্তাহটা খাটাখাটনি করে রবিবারটাও একটু আয়েস করবেন না, তো কবে করবেন! ঠিকই তো। তবে আয়েস করারও কিছু কায়দাকানুন আছে। তা জানা থাকলে সোমবারের সকালেও দেখবেন দিব্যি খুশ মেজাজে আছেন।
রবিবারটা অনেকেই অলস ভাবে কাটিয়ে দেন বলেই, সোমবার সকালে তাঁদের একটা অবসাদ ঘিরে থাকে। কাজে কম্মে মন বসতে চায়না। আর তারই পোশাকি নাম ‘মান-ডে ব্লুস’- সেটা তো আমরা সবাই জানি। তাই রবিবারটা যেমন বিশ্রামও করবেন তেমন অ্যাক্টিভও থাকাটাও সমান জরুরি। তাই বলে রবিবার দিনটা অফিসের কাজ নিয়ে বসতে বলছিনা।
রবিবার দিন যদি কোথাও ডে আউটে যান, তাহলে আলাদা কথা। তবে দিনটা যদি বাড়িতেই কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেন, তাহলে কয়েকটা কথা মাথায় রাখুন।
ঘুম থেকে তাড়াহুড়ো করে ওঠার তেমন দরকার নেই। ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরেও আরও খানিকক্ষণ বিছানায় গড়িমসি করার বিলাসিতা রবিবার দিনটা করাই যায়। বিছানায় শুয়েই মোবাইলে মেইল চেক করতে পারেন। কাছের বন্ধুদের মেইল করতে পারেন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হালকা আড্ডা দিতে পারেন। কাছের কোনও বন্ধুর সঙ্গেও ফোনে লম্বা আড্ডা চলতে পারে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভিও দেখতে পারেন। নিউজ শুনুন, বা পছন্দের সিরিয়াল, নেটফ্লিক্স। সব চলবে- ওই যাকে আজকাল বলে বিঞ্জ ওয়াচ।
এসব না ভালো লাগলে কানে হেডফোন গুঁজে চুপচাপ গান শুনুন। না হলে পছন্দের বই পড়ুন। অর্থাৎ রবিবারের সকালটা খুব ধীরে সুস্থে শুরু করুন। দেখবেন মেজাজ এমনিই শরিফ থাকবে।
ঘুম ঘুম জড়তাটা কমে গেলে, ফ্রেশ হয়ে নিন। জমিয়ে ব্রেকফাস্ট করুন। সম্ভব হলে পরিবারের সবার সঙ্গে বসে রবিবারের সকালের জলখাবারটা খান। কচুরি আলুরদম জিলিপির- জলখাবার মাঝে মাঝে চলতেই পারে। তবে প্রতি রবিবার নয়। বরং সুস্বাদু কোনও পদ বেছে নিন, যা পুষ্টি জোগাবে, মুড ভালো রাখবে। এটা কোনও কঠিন কাজই নয়। ইন্টারনেটে খুঁজুন। এমন হাজার একটা রেসিপি আপনার মুঠোফোনের স্ক্রিনে ফুটে উঠবে।
এরই মধ্যে এক ফাঁকে সারা আগামী সপ্তাহের জন্য একটা টু-ডু লিস্ট তৈরি করে নিন। এই কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ, এবং সকালের দিকে করলেই ভালো। সারা সপ্তাহে গুছিয়ে কাজ করতে এই লিস্টটি পদে পদে সাহায্য করবে। আবার লিস্ট তৈরি করতে করতে আপনি দেখবেন আপনি আসছে সপ্তাহের কাজের জন্য মনে মনে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছেন।
যদি পারেন তাহলে রবিবার সকালের খানিকক্ষণ রাখতে পারেন ঘর গোছানোর জন্য। তবে বেশি স্ট্রেস নেবেন না। আধঘণ্টার বেশি সময়ও রাখার দরকার নেই। এই সময়ের মধ্যেই ডেস্ক, ডেসিং টেবল ইত্যাদি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করি। ওইটুকুই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি করতে হলে বাড়ির অন্যদের সাহায্য নিন। জামা কাপড় কাচার মতো কাজ শনিবার রাতের মধ্যেই সেরে নিন।
রবিবার আপনার নিজের মতো সময় কাটানোর দিন। যতটা মি-টাইম চান ততটাই নিন। আর মি-টাইমের মধ্যে নিজের যত্ন নেওয়াটাও পড়ে। মুখে বিউটি মাস্ক লাগান। বা পুরনো নেলপলিশ তুলে নতুন করে নখ রাঙিয়ে নিন। এই সময়টা আরও এক প্রস্থ টিভি দেখে নিন। কে মানা করেছে?
তবে মহিলাদের জন্য কয়েকটা বাঁধাধরা কাজ তো থাকেই। যেমন রান্নাবান্না। রান্নার লোক থাকলে আলাদা কথা। যদি সারা সপ্তাহ অফিস করে রবিবারেও রান্না করতে হয়, এবং সেটা যদি আপনার একান্ত আক্ষেপের কারণ হয়, তবে তার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রাখুন। ঘণ্টা খানেকের বেশি রান্না ঘরে কাটানোর দরকার নেই। যদি বিশেষ মধ্যাহ্ন ভোজনের প্ল্যান হয়, তবে বাড়ির সবাই যেন হাত লাগান, সেই ব্যবস্থা করুন।
তবে অনেকের কাছেই রান্না করাটা একটা স্ট্রেস বাস্টার।শত খাটাখাটনিতেও কোনও ক্লান্তিবোধ হয়না। তাঁরা কিন্তু এই দলে পড়বেন না। জমিয়ে রান্না করুন। যারা সারা সপ্তাহ রান্না করেন না, তাঁরা এই দিন কিছুটা সময় রান্না ঘরে কাটাতে চাইলে কাটাতে পারেন। দারুণ একটা ডিনার রান্না করে সবাইকে চমকে দিন।
রবিবারের বিকেলটা জম্পেশ প্ল্যান করুন। শুয়ে বসে কাটানোর কোনও মানে নেই। বাড়িতে ছোট খাটো আড্ডার আসর বসতেই পারে। তবে বাইরে কোথাও কাটালেও মন্দ হয়না। সিনেমা দেখতে যেতে পারেন, কোনও বুক স্টোরে যেতে পারেন। ভাবুন তো কী করলে রবিবারের বিকেলটা সুন্দর হয়ে উঠবে।
তবে যাই করুন না কেন। তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যান। লেট নাইট পার্টি ইত্যাদি যা করার শনিবারের জন্য বরাদ্দ রাখুন। ভালো ঘুম হলে সোমবার সকালেও আপনি তরতাজা থাকবেন।নিজেকেই তখন প্রশ্ন করবেন-‘মান-ডে ব্লুস’ খায়, না মাথায় মাখে!