পেশাগত জীবনে বলুন বা ব্যক্তিগত জীবন, শত চেষ্টা করেও ‘স্ট্রেস’ শব্দটাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছেনা? স্ট্রেস মোকাবিলা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল স্ট্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ফেলা।
জীবনে তো নানা ওঠাপড়া থাকবেই। তাই স্ট্রেসও থাকবে। সেটা সমস্যা নয়। সমস্যাটা হলো স্ট্রেস যখন আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। তাই প্রথম থেকেই স্ট্রেসকে সহজ ভাবে মেনে নিলে, স্ট্রেসের মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে ওঠে।
আমরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বের অধিকারী। স্বাভাবিকভাবেই স্ট্রেস মোকাবিলার দাওয়াই এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। সবচেয়ে আগে দরকার নিজেকে ঠিক মতো বোঝা। নিজে কি চান, আগে সেই সম্পর্কে নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে নিন। কি থেকে স্ট্রেস তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও ভাবুন। আপনি ঠিক যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, ঠিক সেভাবেই তার মোকাবিলা করুন।
সব সময় স্ট্রেসকে বেশি পাত্তা দিয়ে লাভ নেই। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে চট করে ভেবে নিন- সমস্যা স্বল্পস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী। যদি দেখেন সহজেই মিটে যাবে, অযথা স্ট্রেসড না হয়ে, যত তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নেওয়া যায় সেই চেষ্টা করুন।
কোনও সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস তৈরি করলে, আগেই বলেছি প্রথমেই স্ট্রেসের অস্তিত্বটা মেনে নিন। এবার ভাবুন কীভাবে আপনি সেই স্ট্রেসের মোকাবিলা করবেন। অযথা দুশ্চিন্তা না করে সমস্যার সমাধানে ফোকাস করুন। অনেক সময় অনেক পরিস্থিতিই কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। তাই সেই সব ক্ষেত্রে স্ট্রেস মোকাবিলার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ধৈর্য্য।
সাময়িক ভাবে স্ট্রেস কমাতে কয়েকটি পদ্ধতি আপনার কাজে লাগতে পারে। কোনও কিছুই যখন ভালো লাগছেনা, তখন সেই মুহূর্তে আপনার যা ইচ্ছে করছে তাই করুন। কারোর ক্ষতি না হলেই হল। চকোলেট খান। পছন্দের রেস্তোরাঁয় যান। সিনেমা দেখুন। যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন, তবে ক্যামোমাইল টি খান।
এমনকি একদফা ঘুমোতে ইচ্ছে করলেও তাই করুন। ঘুম স্ট্রেস উপশমে বেশ উপকারী।
চিৎকার করে কাঁদতে পারেন। অবশ্যই কাছে পিঠে কেউ না থাকলে। কারোর উপর রাগ হলে, যদি তাঁকে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে পারলে শান্তি পাবেন বলে মনে করেন, তবে তাই করুন। তবে তা করলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠবে কিনা সেটা ভেবে দেখাও জরুরি।
একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, যাঁরা প্রথম থেকেই একটা ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল বেছে নেন, তাঁরা কিন্তু খুব সহজেই স্ট্রেস হ্যান্ডেল করতে পারেন। তাই জীবনযাপনে খানিকটা শৃঙ্খলা প্রয়োজন বইকি। কয়েকটা অভ্যাসের বদল স্ট্রেস মোকাবিলা করতে বেশ অনেকটাই সাহায্য করে। ট্রাই করে দেখুন।
স্ট্রেস কমাতে জলের কোনও জুড়ি নেই। তাই কাজ থেকে বাড়ি ফিরে ভালো ভাবে স্নান করে নিন। ক্লান্তি কমে যাবে। ক্লান্ত ভাব অনেক সময় স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয়। চোখে মুখে জলের ছিটে দিলেও উপকার পাবেন।
প্রতিদিন নিয়ম করে খানিকটা সময় শরীর চর্চা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে একটা স্থায়ী ফিল গুড এফেক্ট তৈরি হয় আমাদের মনে। তা স্ট্রেসের মোকাবিলায় সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও স্থায়ী ভাবে স্ট্রেস মোকাবিলায় সাহায্য করে।
প্রতিদিন নতুন কিছু একটা শেখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যেমন নতুন কোনও রান্না ট্রাই করা। ইন্টারনেটে কোনও নতুন আর্টিকেল পড়া। নতুন কোনও শব্দ শেখা ইত্যাদি। পেশাগত জীবনের ব্যস্তটা থাকবেই। সেই ব্যস্ততার ফাঁকেই কোনও একটা হবি এক্সপ্লোর করুন।
বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন। সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। অ্যাক্টিভ সোশ্যাল লাইফ স্ট্রেস বাস্টিং করতে সাহায্য করে।
প্রকৃতির সংস্পর্শ মনের দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তাই গাছগাছালি আছে এমন জায়গা, পার্ক, লেক, নদীর ধারে হেঁটে আসতে পারেন।
এটা খুব ক্লিশেড শোনাবে। তা সত্বেও বলছি ভালো গান বা মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তাই যখনই মন খারাপ করবে তখনই হেডফোনটা কানে নিয়ে বসুন। পছন্দের গান কিছুক্ষণ বাদেই আপনার মনকে শান্ত করে তুলবে।