তাবড় শব্দবিদ ও ফলি আর্টিস্ট এর শব্দ অনুকরণ করিতে চেয়েছেন এ যাবত কিন্তু বিফল হয়েছেন। জামাই ঢেকুরের শব্দ শোনা যায়নি। এ শব্দ আগে শোনা গেলেও আর শোনা যায় না। কারন সব জামাই সরকারি হাফ ছুটি পায় না। যা পায় তাতে নাকে মুখে ছাইপাঁশ গুঁজে অম্ল ঢেকুর তোলে বা বিকেলবেলা হতাশার রাম ঢেকুর। রাম ঢেকুর বড় বেয়াদব জিনিস। সচরাচর তেলেভাজা খাইয়া তৃষ্ণা নিবারণ করিলে ওঠে।
কিন্তু জামাই ঢেকুর উঠাইতে শ্রম ও অধ্যবসায়, দুই লাগে। এতে তৃপ্তি আছে। আবেশ আছে হেঁশেল সাধনার, ভালোবাসার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আছে।
শাশুড়িকে নিজে হাতে রন্ধন কার্য সম্পাদন করিতে হয় ও পাশপাশি এও নজর দিতে হয় যাতে জামাই আদরে আল্লাদে ঢেকুর তোলে। সর্টকাটে কোকা কোলা খাওয়াইয়া ঢেকুর তোলাইলে পয়েন্ট কাটা যাবে। পেট বা পেট্রিয়ারকি, কোনটাই তৃপ্ত হবে না।
বাঙালি জামাইগন ভাগ্যবান ছিলেন মুক্ত বাজার আসিবার আগে!! এখন উল্কাকুচির মতো জামাইরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশ্বজুড়ে। আর ওই পাখা আর দূর্বা ঘাসের ষাট ও নেই। থাকার মধ্যে স্কাইপ কল, হোয়াটসাপে গ্রুপ মেসেজ।
ধরে নিন একটি স্বপ্নিল জামাইষষ্ঠী প্রবল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আয়োজন করতে পেরেছেন। এসব জামাইষষ্ঠীই জন্ম দেয় জামাই ঢেকুর এর যদি শাশুড়ির সাধনা থাকে। হোক না স্বপ্ন।
ধরুন আজ আপিস হইতে আসিতেই আম, লিচু, কালো আঙুর, রাজভোগ, মাখা সন্দেশ প্লেটে প্লেটে।
এরপর ধরুন আইলো ভেটকি মাছ এর ফ্রাই, পিছন পিছন লেনিনের দেশ খ্যাত সুগন্ধি সোমরস।
তারপর ক্রমাগত মাছ ও মদিরা রিফিল হইতেছে।
মধ্যরাতে অনাবিল মুখে আসিলো সাদা ভাত, নারকেল দেওয়া মুগডাল, ইয়া বড় গলদা চিংড়ি, খাসির লাল ঝোল সমেত মাংস। একে অন্যের শরীরে ঘষাঘোষি করিলে এদের স্বাদ খোলতাই হয়।
এ প্রবল যুদ্ধ শেষে রনক্লান্ত যোদ্ধা যখন পায়চারি করিতেছে অস্বস্তি কমাইতে ও আশ্রয় খোঁজে এসির হাওয়ার, সহসা বাঙালির আদর্শ শাশুড়ি আসিলো দুশ্চিন্তামুখর হইয়া। ওটাই কিস্তিমাত হবে ক্লাইম্যাক্স সিনে।
বাবা এমা তোমায় ইলিশ মাছ দিতে একদম ভুলে গেছি গো! প্লেটে দিচ্ছি এমনি খেয়ে নাও।
ফ্যান এর দিকে তাকাইয়া জামাই কিরকম উদাস হইয়া যাবে। একটি মঙ্গলসূচক ঢেকুর উঠিল। গাম্ভীর্যপূর্ণ কিন্তু আদরের। ওটাই জামাই ঢেকুর।
বেঁচে থাক জামাই আদর। সিঁথিতে অক্ষয় থাক স্বপ্নিল ঢেকুর গুলো তৃপ্তি মাখা। নস্টালজিয়াই সই।
—–ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ