ইতি মহারাষ্ট্রের মহা নাটক। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের জোট মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করেছে। তাঁদের ঐক্যের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে বিজেপিকে। সেই সরকারের প্রথম দিনেই জোটের অন্যতম সদস্য শরদ পাওয়ার স্মরণ করলেন মহারাষ্ট্রের জনপ্রিয় নেতা তথা শিবসেনা প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরেকে। সেনা, এনসিপি, কংংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠকে জোট নির্মাণের অন্যতম কান্ডারী পাওয়ার বলেন, ”বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন বালাসাহেব।” তিন দলের বিধায়কদের সর্বসম্মতিক্রমে মুখ্যমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হন উদ্ধব ঠাকরে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানান এনসিপি প্রধান।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনকে কেন্দ্র করে বিজেপির সঙ্গে সংঘাত বাঁধে তাদের একদা শরিক শিবসেনার। সেই অবসরের শিবসেনার কাছাকাছি আসে এনসিপি। জোট সরকার তৈরি করতে উদ্যোগী হন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। শিবসেনা ও কংগ্রেসের দূরত্ব ঘুচিয়ে পরস্পর বিরোধী দুই দলকে কাছাকাছি আনার পিছনে রয়েছে পাওয়ারের ‘মগজাস্ত্র’। বহু চড়াই উতরাইয়ের পর সেই জোটই সরকার গড়তে চলেছে। স্মৃতিমেদুর বর্ষীয়ান নেতা শরদ পাওয়ার। তাঁর কথায় উঠে আসে বালাসাহেব প্রসঙ্গ।
শরদ পাওয়ার ও বাল ঠাকরে রাজনীতির প্রকাশ্য ময়দানে একে অপরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতেন। কিন্তু, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তা প্রভাব ফেলেনি। এনসিপি প্রধান বলেন, ‘এমনও হয়েছে যে র্যালিতে আমি ও ঠাকরে সাহেব পরস্পরকে খুব আক্রমণ করেছি। কিন্তু, সেই ওই দিনই নৈশ ভোজে দেখা হয়েছে আমাদের।’ তাঁর কথায় ঠাকরে সাহেব প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদেরও বিধানসভায় যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পেরেছেন। এটা তাঁর রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উদাহরণ হিসাবে পাওয়ার তুলে ধরেন চন্দ্রকান্ত খাইরেকে। বলেন, ‘বিগত ৩০ বছর ধরে চন্দ্রকান্ত খাইরে বিধানসভা ও লোকসভার সদস্য হয়ে কাজ করছেন। যে গোষ্ঠী থেকে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন তার সংখ্য়া মাত্র তিন হাজার।’
তবে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপির জোট বড় চমক নয়। এর আগেও এনসিপি-র সঙ্গে শিবসেনার বন্ধুত্বের নিদর্শন দেখেছে মারাঠি জনতা। তখন কংগ্রেসে ছিলেন পাওয়ার। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আজকের এনসিপি প্রধানকেই সমর্থন করেছিলেন শিবসেনার প্রাণপুরুষ বাল ঠাকরে। এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীকালে যখন পাওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে রাজ্যসভায় মনোনীত হলেন, তখনও পাওয়ারের সঙ্গে বন্ধুত্বকে সম্মান জানিয়ে, ঠাকরে সেনা-বিজেপি জোটের কোনও প্রার্থীকে দাঁড় করাননি সুপ্রিয়ার বিরুদ্ধে। এরপর আবার রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে যখন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে মনোনীত করল কংগ্রেস, তখন শিবসেনার সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন পাওয়ারই।