ঠিক পাঁচ বছর আগে আজই মৃত্যু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটার ফিল হিউজের। হিউজের অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু স্টিভ স্মিথের মুখে উঠে এল সে দিনের ঘটনার কথা।সেটা ছিল ২৫ নভেম্বর, ২০১৪। শেফিল্ড শিল্ডের একটি ম্যাচে ব্যাট করতে গিয়ে শন অ্যাবটের একটি বাউন্সার লাগে হিউজের মাথায়। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। দিন দু’য়েক বাদে মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে বস্তুত কেঁপে গিয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। আজ যখন অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, তখনই এই হৃদয়বিদারী ঘটনার পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। স্টিভ স্মিথ সে দিন সেঞ্চুরির পর মাঠের ৪০৮ লেখা সেই জায়গাটায় এসে ব্যাট তুলেছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধুকে মনে রেখে, যে ছবি ঢুকে গিয়েছে ক্রিকেটের লোকগাথায়।
হিউজের মৃত্যুর পরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। ওই ঘটনার ঠিক পরে পরেই অ্যাডিলেডে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। যে টেস্টে সেঞ্চুরি করে হিউজের স্মৃতিতে ডুবে গিয়েছিলেন স্মিথ। মঙ্গলবার অ্যাডিলেডে সেই ভয়ঙ্কর সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্মিথ বলেছেন, ‘‘ওই সময় আমাদের মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। কিছু ভাবতে পারছিলাম না। সম্পূর্ণ আবেগশূন্য অবস্থায় ক্রিকেট খেলছিলাম।’’
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৫টি টেস্ট এবং ২৪টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছিলেন পঁচিশ বছরের হিউজ। তাঁর মৃত্যুর পরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া হেলমেটের সঙ্গে ‘নেক গার্ড’ পরা বাধ্যতামূলক করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্মিথ এই ‘নেক গার্ড’ পরতে প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন। বলেছিলেন, তাঁর মনে হচ্ছে এমআরআই মেশিনের মধ্যে আছেন। কিন্তু অ্যাশেজে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে ওই বিশেষ শিরোস্ত্রাণ ব্যবহার করেছিলেন স্মিথ। তার পরে সিদ্ধান্ত বদলান তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্মিথ বলছেন, ‘‘এখন ক্রিকেটীয় সরঞ্জামে নানা বদল এসেছে। তাই মনে হয়, খেলাটা অনেক বেশি নিরাপদ। বিশেষ একটা নেক গার্ড চালু হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য। বেশির ভাগ ক্রিকেটার সেটা এখন ব্যবহার করছে। আমি সম্ভবত শেষ পর্যায়ের ক্রিকেটার, যে এটা ব্যবহার করতে রাজি হয়েছে। সব মিলিয়ে বলব, ক্রিকেট এখন অনেক নিরাপদ।’’
হিউজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্মিথ আরও বলেন, ‘‘আমরা কয়েক জন হিউজের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। কী ভাবে যে এই পাঁচ বছর কেটে গেল, ভাবতেও পারছি না। আমি নিশ্চিত, আমরা অনেকেই আমাদের ওই ছোট্ট বন্ধুকে ভুলতে পারব না।’’ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কেভিন রবার্টস বলেছেন, ‘‘পাঁচ বছর হতে চলল ফিল আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু এই পাঁচ বছরে এমন একটা দিনও যায়নি যখন আমরা ওর অভাব টের পাইনি।’’ স্মিথও যেমন বলেছেন, ‘‘এই পাঁচ বছরে প্রায় সব সময়ই ফিলকে নিয়ে নানা ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠত। ওর কথা মনে পড়ে যেত।’’