কেন্দ্রের বিভিন্ন জনবিরোধী পদক্ষেপের জেরে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। এবার ভোগান্তিতে পড়েছেন পেনশনভোগীরা। জীবিত থাকার প্রমাণ দাখিল করতে গিয়ে প্রাণ চলে যাওয়ার জোগাড় তাঁদের। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।
এখন পেনশন অ্যাকাউন্টে আধার যুক্ত করা হয়েছে। তা নিয়েও পেনশনভোগীদের দুর্ভোগ চরমে। দেখা যাচ্ছে বয়সজনিত কারণে আঙুলের রেখা অনেকেরই বদলে গেছে। ফলে, আধারের আঙুলের ছাপের সঙ্গে এখনকারটা মিলছে না। এরকম ক্ষেত্রেও সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের বলে দেওয়া হচ্ছে আধার কেন্দ্রে গিয়ে আঙুলের ছাপ বদল নথিভুক্ত করিয়ে আসতে। কারও আবার সমস্যা সই মিলছে না। বয়সজনিত কারণে হাত কাঁপায় এরকমটা হতে পারে। অসুস্থতার কারণেও অনেকের হাতের লেখা বদলে যায়। যাঁদের ক্ষেত্রে একেবারেই মিলছে না, তাঁদের বলা হচ্ছে পেনশন অফিসে যোগাযোগ করতে।
যাঁদের সঙ্গে কেউ আসেননি, যাঁদের হাঁটতে, চলতে অসুবিধা তাঁদের সমস্যা আরও বেশি। সুগার পেশেন্টরা পড়েছেন আতান্তরে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে, সময় মতো না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অথচ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই লাইফ সার্টিফিকেট না দিলে পেনশন বন্ধ হয়ে যাবে। পরের মাস থেকে খাবার, ওষুধ কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। ফলে, ৩/৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের।
অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেন নাগর জানিয়েছেন, ব্যাঙ্কে পেনশনভোগীদের ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ দিতে এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় কারণ পরিকাঠামোর অভাব, তেমন আরও এক কারণ কম সংখ্যক কর্মী থাকা। পর্যাপ্ত কর্মী থাকলে যে কোনও সরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় একাধিক কাউন্টার খুলে অনেক কম সময়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সারা যায়। যাঁরা ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম সারেন, তাঁদের এক বা দু’জনকে দিয়ে পেনশনের ‘লাইফ সার্টিফিকেট’–এর বিষয়টা সারতে হচ্ছে। এতে পেনশনভোগীদের যেমন চরম দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনই চাপ বাড়ছে ব্যাঙ্কের কর্মীদের ওপরও। ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ ব্যাপারটা অনলাইনে ব্যবস্থা করলে সুবিধা হতে পারত। এতে যে কেউ মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে বাড়িতে বসেই ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ ব্যাঙ্কে দিয়ে দিতে পারতেন। একান্তই তা না হলে সাইবার ক্যাফেতে গিয়েও করা সম্ভব হত।
এমন বেশ কিছু ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে যেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর যখন কোনও ব্যক্তির ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি প্রায় সম্পূর্ণ করে এনেছেন, তখন হঠাৎ ‘লিঙ্ক ফেলিওর’। লিঙ্ক এলে আবার নতুন করে করতে হবে। এলাহাবাদ থেকে সালকিয়ার ইউবিআই ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চে এসেছিলেন ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানির এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। চাকরি জীবন শেষে এলাহাবাদেই তাঁর বাস। দুদিনের চেষ্টায়ও তিনি ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ দিতে পারেননি। কারণ ৫ বার লিঙ্ক ফেলিওর হয়েছে। তিনি এলাহাবাদে পেনশন অ্যাকাউন্ট স্থানান্তর করতেও পারছেন না। কারণ জায়গাটি অন্য পেনশন জোনের অন্তর্গত।
ব্যাঙ্কগুলিতে হাজার হাজার লোক ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ করাতে এলেও বসার জায়গা খুবই কম। তারওপর কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে বেশির ভাগ ব্যাঙ্কের শাখা দোতলা বা তিনতলায়। সিঁড়ি ভেঙে উঠতে, সেখানে গিয়ে টানা দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে রয়েছে খাবার জলের অভাব, বাথরুমের সমস্যা। এতে অস্বস্তি আরও বাড়ছে। উপায় নেই, তারপরও নানান শারীরিক সমস্যা নিয়েও পেনশনভোগীরা টানা অপেক্ষা করছেন। কারণ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ না দেওয়া গেলে ডিসেম্বর থেকে পেনশন পাবেন না।