গত ৫ আগস্ট সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিল ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বিল পাশ করিয়ে কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে দু’টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করার ঘোষণা করেন তিনি। অবশেষে ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে জম্মু-কাশ্মীর। তবে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর ১০০ দিনের বেশি পেরিয়ে গেলেও এখনও সম্পূর্ণ ভাবে অচলাবস্থা কাটেনি উপত্যকায়। কারণ সাড়ে তিন মাস পরেও কার্যত ঘরবন্দী গোটা কাশ্মীর। রাস্তার মোড়ে বন্দুকের নল উঁচিয়ে হাজির সেনা-আধাসেনা। জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞাও। বন্ধ দোকানপাট, স্কুল, কলেজ। নেই ইন্টারনেট। তবে গতকাল সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবশ্য দাবি করলেন, কাশ্মীর স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।
বুধবার শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনে প্রশ্নোত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পালা আসতেই কাশ্মীর নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নবাণের মুখে পড়েন অমিত শাহ ও তাঁর প্রতিমন্ত্রীরা। কাশ্মীর প্রসঙ্গে জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই শাহ দাবি করেন, ‘উপত্যকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।’ তবে সেক্ষেত্রে কেন আটক রাজনৈতিক নেতাদের ছাড়া হচ্ছে না সেই প্রশ্নে নীরব কেন্দ্র। ভারতীয় রাজনীতিকেরা কাশ্মীরে যেতে না পারলেও কী ভাবে বিদেশি প্রতিনিধি দল উপত্যকা ঘুরে আসছে তা নিয়েও ব্যাকফুটে তারা। বিরোধীদের অভিযোগ, দায়সারা ভাবে কেন্দ্র জবাবে জানিয়েছে ভারতীয় রাজনীতিকদের উপরে হামলার সম্ভাবনা থাকায় তাঁদের কাশ্মীরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বিদেশি প্রতিনিধিদের সফর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডির সাফাই, ‘জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী সমস্যা কী ভাবে ভারতে প্রভাব ফেলেছে তা দেখতে এসেছিলেন ওই বিদেশি প্রতিনিধিরা। এই ধরনের আদানপ্রদান অন্য রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’ অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ ইন্টারনেট কবে থেকে চালু হবে তা জানতে চেয়েছিলেন। স্পষ্ট কোনও দিনক্ষণ জানাতে পারেননি শাহ। আজাদের অভিযোগ ছিল, ইন্টারনেট না থাকায় সাধারণ মানুষের মতোই অসুবিধেয় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের। নেট সংযোগ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা। শাহর সাফাই, ‘ইন্টারনেট সত্যিই প্রয়োজনীয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে দেশের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। সুরক্ষা সম্পর্কিত সমস্ত বিষয় দেখেই ইন্টারনেট চালু করা হবে।’
অতিরিক্ত বাহিনীর উপস্থিতি, মোবাইল-ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত সাড়ে তিন মাসে বড় মাপের বিক্ষোভ বা পুলিশের গুলিতে কোনও বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেন শাহ। কাশ্মীর কতটা স্বাভাবিক তা প্রমাণে পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘৯৩,২৪৭টি ল্যান্ডলাইন ও ৫৯ লক্ষ মোবাইল চালু হয়েছে। চাষিদের কাছ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন ফসল কিনেছে নাফেড। পরীক্ষায় বসেছে ৯৯.৪৮ শতাংশ পড়ুয়া।’ শাহের পরিসংখ্যানের এই ফিরিস্তি শুনে গুলাম নবি আজাদের টিপ্পনী, ‘সম্ভবত আপনার হাতে অন্য রাজ্যের রিপোর্ট এসেছে। স্কুল-কলেজ তো সব বন্ধ।’ এরপর শাহও ‘সরকার বলছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে’ বলে আর বিশেষ কথা বাড়াননি।